শরীয়তপুর স্টেডিয়ামে খেলা বন্ধ রেখে মেলার আয়োজন, মাঠ নষ্ট

খেলাধুলা বন্ধ রেখে চলছে মেলার আয়োজন। প্যাভিলিয়ন নির্মাণের জন্য করা হচ্ছে স্থাপনা। গত সোমবার শরীয়তপুর জেলা স্টেডিয়ামেছবি: প্রথম আলো

খেলাধুলা বন্ধ রেখে শরীয়তপুর জেলা স্টেডিয়াম মেলার জন্য ভাড়া দিয়েছে জেলা প্রশাসন। মাসব্যাপী এই মেলা বসাতে ইতিমধ্যে পুরো স্টেডিয়ামের মাঠ নষ্ট করে স্থাপনা নির্মাণ করছেন আয়োজকেরা। মাঠের ক্ষতি করে এমন আয়োজন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকেরা।

জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মণিপুরি তাঁতশিল্প জামদানি ও বেনারসি কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে মেলার জন্য স্টেডিয়ামটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। মাসব্যাপী এই মেলার জন্য অন্তত দুই মাস খেলাধুলা বন্ধ রাখতে হবে। এ বিষয়ে জানেন না সংস্থার সদস্যরা। ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ একক সিদ্ধান্তে মেলার বসানোর জন্য স্টেডিয়াম ভাড়া দিয়েছেন। ৩১ জানুয়ারি কিংবা ১ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

শরীয়তপুর শহরের ধানুকা এলাকায় ১৯৭৮ সালে ৬ একর জমির ওপর শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সী আব্দুর রউফের নামে জেলা স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়। ১২ হাজার আসনবিশিষ্ট ওই স্টেডিয়ামে বছরজুড়ে ক্রিকেট, ফুটবল টুনার্মেন্টের আয়োজন করা হয়।

গত সোমবার সকালে স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে মেলা আয়োজনের তোড়জোড় চলছে। বিভিন্ন স্থানে গর্ত করে বাঁশ-খুঁটি বসিয়ে দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। ক্রিকেটের দুটি পিচের পাশে ইট ও লোহা দিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। অনুশীলনের দুটি ক্রিকেট পিচের ওপরও দোকান বসানো হচ্ছে। ইটের স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।

মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ১২ জানুয়ারি দোকান নির্মাণকাজ শুরু করেছেন। মেলা চলবে ১ মাস। আর দোকান অপসারণ করতে সময় লাগবে আরও ১৫ দিন। ওই দুই মাস স্টেডিয়ামে সব খেলাধুলা বন্ধ থাকবে। মেলার জন্য ৫৫টি দোকান বসানো হচ্ছে। এ ছাড়া একটি পানির ফোয়ারা, একটি ফটক, বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য আটটি রাইড বসানো হচ্ছে। মাটি গর্ত করে ইট, লোহা ও বাঁশ-কাঠ দিয়ে ওই অবকাঠামোগুলো বানানো হচ্ছে।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার একটি সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য গত জুনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বর্ষা মৌসুম, পবিত্র ঈদুল আজহা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে ওই টুর্নামেন্ট আয়োজন করা যায়নি। চলতি জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৩২টি দল নিয়ে ৫৬টি ম্যাচের এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করার কথা ছিল। কিন্তু মেলার কারণে এ আয়োজন এখন বন্ধ।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য বরাদ্দ পেয়েছেন। কিন্তু এখনো আয়োজন করতে পারেননি। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে আয়োজন করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ দেখেন, মাঠে মেলার আয়োজন চলছে। পরে জেলা প্রশাসক মৌখিকভাবে তাঁকে মেলার বিষয়টি জানিয়েছেন। এর বেশি কিছু তিনি বলতে পারবেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের একজন কোচ প্রথম আলোকে বলেন, মেলার জন্য অনূর্ধ্ব–১৪, অনূর্ধ্ব–১৬ ও অনূর্ধ্ব–১৮ দলের খেলোয়াড়দের জেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন বন্ধ রাখতে হয়েছে। এমনটা করা ঠিক হয়নি।

অনূর্ধ্ব-১৮ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় আফিফ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্টেডিয়ামে প্রতিদিন ক্রিকেট খেলার অনুশীলন করি। ১৫ দিন যাবৎ অনুশীলন বন্ধ। ক্রিকেটের প্রাণ হচ্ছে উইকেট। মেলার দোকান বসানোর কারণে সেই উইকেট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কষ্টে আমাদের বুকটা ফেটে যাচ্ছে।’

এলাকার মানুষের ভালোর জন্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মাঠ ছাড়া মেলা করার মতো বড় কোনো মাঠ নেই। মেলার কারণে মাঠের যা ক্ষতি হবে, তা আয়োজকেরা সংস্কার করে দেবেন, এমন শর্ত দেওয়া হয়েছে। আর যে টুর্নামেন্টগুলো হওয়ার কথা, তা মেলার পর সুবিধাজনক সময়ে করা হবে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, মেলার আয় থেকে ৪০ শতাংশ অর্থ ক্রীড়া সংস্থাকে দেওয়ার কথা বলেছেন আয়োজকেরা। এখনো তাদের কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেওয়া হয়নি। একক সিদ্ধান্তে স্টেডিয়াম ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শরীয়তপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কোনো সভা করা হয়নি। জেলা প্রশাসক কারও কোনো মতামত না নিয়ে এককভাবে স্টেডিয়ামে মেলার আয়োজন করতে দিয়েছেন।