কেরানীগঞ্জে ইতালিপ্রবাসীর বাড়ির জায়গা নিজের দাবি করে দখলের চেষ্টা, ভাঙচুর
ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক প্রবাসীর বাড়ি দখল ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তিনি বাড়ি রক্ষায় ইতালি থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সোমবার বেলা দেড়টার দিকে ওই প্রবাসী কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ইউনিয়নের স্কুল রোড এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
ভুক্তভোগী প্রবাসী হলেন লিটন হাওলাদার (৪৫)। তিনি কেরানীগঞ্জের শাক্তা ইউনিয়নের কূলচর গ্রামের ছলেমান হাওলাদারের ছেলে। সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী লিটন দাবি করেন, তিনি ১৭ বছর ধরে ইতালিতে আছেন। চার বছর আগে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন মধ্যেরচর মৌজায় ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। এ জমির বৈধ কাগজপত্র তাঁর কাছে রয়েছে। নিয়মিত খাজনাও দিচ্ছেন। সেখানে ছয় কক্ষের একটি সেমিপাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন।
লিটন হাওলাদারের অভিযোগ, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত আলমগীর হোসেন (৩৬) ও তাঁর সহযোগী শাহীন মিয়া (৩৮), এনামুল হক (৪০), শাহাদাত হোসেনসহ (৩৪) কয়েকজন ওই জমির মালিকানা দাবি করেন। একপর্যায়ে তাঁরা বাড়ির মালিকানার সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলেন। লিটন বলেন, এ ঘটনায় তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করে। পরবর্তী সময়ে আদালতে একটি মামলা করে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১ অক্টোবর।
সংবাদ সম্মেলনে লিটন হাওলাদার বলেন, ‘আদালতে চলমান মামলার তোয়াক্কা না করে গত ৩১ আগস্ট সকালে আলমগীর, শাহাদাত, শাহীনসহ ৩০ থেকে ৩৫ জন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে জোরপূর্বক আমার বাড়িতে প্রবেশ করে। একপর্যায়ে তারা ভাড়াটেদের ওপর হামলা করে। এরপর তাদের বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে আমার ছোট ভাই রফিকুল ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এরপর জীবন রক্ষায় সে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এরপর আলমগীর সন্ত্রাসীদের প্রহরা বসিয়ে আমার বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করে।’
লিটন হাওলাদার আরও বলেন, ‘এ ঘটনা শুনে বাড়ি রক্ষা করতে চার দিন আগে ইতালি থেকে কেরানীগঞ্জে ফিরে আসি। তাঁরা আমার দেশে ফেরার কথা জানতে পেরে ওই বাড়ির আশপাশে না যাওয়ার হুমকি দেয়। সেখানে গেলে আমাকে প্রাণে মেরা ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়। সর্বশেষ ৩ সেপ্টেম্বর আমার ছোট ভাই ওই বাড়িতে গিয়ে দেখতে পায়, ১৪ থেকে ১৫ জন যুবক দেশীয় অস্ত্র হাতে গেটের সামনে বসে আছে। আর বাড়ি ভাঙার কাজ চলমান রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে নিরাপত্তাহীনতা ও নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন লিটন হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘প্রবাসে থেকে রক্ত পানি করে উপার্জিত টাকায় কেনা আমার এই বাড়ি দখল হয়ে যাবে, সেটা কখনো ভাবিনি। দেশে ফিরেও আমি আলমগীর ও তার সহযোগীদের হুমকিতে সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি মাননীয় ভূমি উপদেষ্টা ও প্রশাসনের কাছে হাত জোড় করে আবেদন করছি, আমার জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে কেনা এই বাড়ি দখলমুক্ত করে আমাকে ফিরিয়ে দিন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাড়ির এক ভাড়াটে বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমরা প্রবাসী লিটনের বাড়িতে ভাড়া থাকছিলাম। প্রতি মাসে তাঁর ভাই এসে ভাড়ার টাকা নিয়ে যেতেন। সম্প্রতি আলমগীর নামের এক লোক এসে নিজেকে এই বাড়ির মালিক বলে আমাদের বাড়ি খালি করতে বলেন। তবে বাড়ির মালিক লিটন আমাদের বাসায় অবস্থান করতে বললে আমরা সেখানেই থাকি। ৩১ আগস্ট আলমগীর পুনরায় দলবল নিয়ে এসে আমাদের হুমকি দিয়ে মালপত্র বাসার বাইরে ফেলে দেন। পরে আমরা বাধ্য হয়ে সেখান থেকে চলে যাই। এখন আমরা অন্যত্র বসবাস করছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলমগীর হোসেন রাজধানীর লালবাগে থাকেন। মানুষের বিরোধপূর্ণ জমি কিনে তা দখল করে পরে অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন দাবি করেন, প্রবাসী লিটন যে দাগে জমি কিনেছেন, তিনিও সেই দাগে জমি কিনেছেন। এখানে লিটনের কোনো জায়গা নেই।
নিজের কাছে জমির বৈধ কাগজপত্র আছে দাবি করে আলমগীর হোসেন বলেন, ওই জায়গায় তিনি বাড়ি নির্মাণ করবেন। এত দিন জায়গাটি নিজের বলে দাবি করেননি কেন, কেন ৫ আগস্টের পর থেকে জমিটি নিজের বলে দাবি করছেন, এসব প্রশ্নে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে কেরানগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল হক বলেন, ‘ইতালিপ্রবাসী ভাইয়ের জমির বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’