ঘুমন্ত মায়ের পাশ থেকে নিখোঁজ শিশুটিকে ৩ দিনেও পাওয়া যায়নি

হবিগঞ্জ শহরের হরিপুর এলাকায় এই ভাড়া বাসা থেকে চুরি হয়েছে লিজা বেগম ও বাবুল মিয়ার ২১ দিন বয়সী নবজাতক
ছবি: প্রথম আলো

হবিগঞ্জ শহরে ২১ দিন বয়সী নবজাতক মায়ের পাশ থেকে নিখোঁজ হওয়ার তিন দিনেও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে শিশুটিকে হারিয়ে দিশাহারা মা। শিশুটিকে উদ্ধারে পরিবারের সদস্যরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় হন্যে হয়ে ছুটছেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, নবজাতকটির মা চিকিৎসার জন্য তিন মাস আগে হবিগঞ্জ শহরের হরিপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় উঠেছিলেন। কিন্তু এত বড় সমস্যায় পড়বেন, তা কখনো ভাবেননি।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হবিগঞ্জ শহরের হরিপুর এলাকায় গত শনিবার রাতে ২১ দিন বয়সী নবজাতক ফারজানাকে পাশে নিয়ে ঘুমাতে যান মা লিজা বেগম। পরদিন রোববার ভোরবেলা তিনি ঘুম থেকে উঠে শিশুকে দুধ খাওয়াতে গিয়ে দেখেন, নবজাতক পাশে নেই। ঘরের জানালা খোলা। অন‌্যরাও এ সময় জে‌গে ওঠেন। সবাই মি‌লে আশপাশে খোঁজাখুঁজি ক‌রেন। কিন্তু শিশুটিকে আর খুঁজে পাননি। এ ঘটনায় রোববার রাতেই শিশুর বাবা বাবুল মিয়া হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন

আজ সকালে হবিগঞ্জ শহরের হরিপুর এলাকায় যে বাড়িতে লিজা-বাবুল দম্পতি থাকতেন, সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তাঁদের ঘরে তালা ঝুলছে। প্রতিবেশীরা বলেন, শিশুটিকে হারানোর পর থেকে এই দম্পতি বাড়িতে থাকছেন না। লিজা বেগম নির্বাক হয়ে গেছেন। তাই তাঁর বাবা এসে মেয়েকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গেছেন। তিন মাস আগে এখানে একটি ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন লিজা-বাবুল দম্পতি। আশপাশে এমন সাতটি টিনের ছাপরা আছে। বাবুল মিয়া পেশায় ধানের দোকানের কর্মচারী। তাঁর প্রতিবেশীদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ।

প্রতিবেশী তাজুল মিয়া পেশায় মিনি ট্রাকের চালক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার দিন লিজা বেগমের কান্নাকাটির আওয়াজ শুনে আমরা ঘর থেকে বের হই। তখন শুনি, তাঁদের ঘরের জানালা খুলে শিশুটিকে কে বা কারা নিয়ে গেছে। এভাবে শিশু চুরির ঘটনা এর আগে ওই এলাকায় কখনো হয়নি।’

প্রতিবেশী সাব্বির মিয়া বলেন, ‘আমরা ৭টি পরিবারের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন মানুষ একসঙ্গে বসবাস করি। নানা সময় আমাদের ঘরে জিনিসপত্র চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে শিশু চুরির ঘটনা এই প্রথম।’ তিনি বলেন, ‘চোর যে–ই হোক, আমাদের আশপাশেই আছে। পুলিশ ভালো করে তল্লাশি করলে অনেক আগেই শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হতো।’ তাঁর মতে, যত দেরি হবে, শিশুটিকে পাওয়ার আশা তত ক্ষীণ হবে।

লিজা বেগমর স্বামী বাবুল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তিনি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর স্ত্রী যখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, তখন সুচিকিৎসার আশায় হবিগঞ্জ শহরে আসেন এবং হরিপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। এ ভাড়া বাসায় এসে এত বড় বিপদে পড়বেন, তা কখনো ভাবেননি। শিশুটিকে হারিয়ে তাঁর স্ত্রী অনেকটা নির্বাক। তিনি বলেন, ‘আজ তিন-চার দিন হয়ে গেছে। পুলিশ এখনো আমার মেয়েকে উদ্ধার করে দিতে পারেনি। এখন আমরা কী করব, তা ভেবে পাই না। যে কারণে শিশুর সন্ধানে নানা জায়গায় আমাদের ছুটে বেড়াতে হচ্ছে। যে দিকে বলছে, সে দিকেই আমরা ছুটছি।’

সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ব‌দিউজ্জামান ব‌লেন, ঘটনার পর থেকেই শিশুটিকে উদ্ধারে পুলিশ কাজ কর‌ছে। আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত শিশু‌টি‌কে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ত‌বে পুলিশের তল্লাশি অব‌্যাহত আছে।