‘একেবারে ফাঁকা কেন্দ্রে আরামে ভোট দিছি’

খুলনার কয়রা উপজেলার বেদকাশী বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আজ রোববার সকালে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। সকাল ৯টার চিত্রছবি: প্রথম আলো

‘আগে ভোট দিতে গেলি ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াইয়ে থাকা লাগত। চিল্লাপাল্লা-হইহুল্লোড় হতো। এখন ফাঁকা মাঠে কোনো ঝামেলা নেই। সিরিয়াল দেওয়া লাইনও নেই। ভোট দিতেও বেশি সময় নাগলো না। কেন্দ্রে ঢুকে একেবারে ফাঁকা কেন্দ্রে আরামে ভোট দিছি।’ আজ রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়ে বের হয়ে কথাগুলো বলছিলেন স্থানীয় ভোটার আবদুল হাই খোকন (৫৫)। তাঁর বাড়ি কয়রা সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ এলাকায়।

আজ তৃতীয় ধাপের স্থগিত হয়ে যাওয়া উপকূলীয় কয়রা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে, চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। এর আগে গত ২৯ মে কয়রা উপজেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত করা হয় নির্বাচন।

আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কয়রা মদিনাবাদ মডেল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা যায়, ফাঁকা মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছেন। ভেতরে–বাইরে কোনো হইচই নেই। পুরুষ ও নারী ভোটারদের লাইনও একেবারে ফাঁকা। তবে ভোটকক্ষে বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ ভোটারকে ভোট দিতে দেখা গেছে। প্রতিটি ভোটের বুথে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা আছেন।

মদিনাবাদ মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তপন কুমার কর্মকার প্রথম আলোকে বলেন, ভোটকেন্দ্রটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৭৯২। সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন ১৮১ জন। ভিড় না থাকায় দু-একজন ভোটার এসে স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন।

ওই কেন্দ্রের পাশের মদিনাবাদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, তাঁর কেন্দ্রে ভোটার ১ হাজার ৮১৫ জন। সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১৪৫টি। তিনি বলেন, ‘ভোটাররা এসে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন। ভিড় না থাকায় লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে না। আশা করছি, দুপুরের পর ভোটার উপস্থিতি আরও বাড়বে। কারণ, অনেকেই গৃহস্থালির কাজকর্ম সেরে তখন হয়তো ভোট দিতে আসবেন।’

এর আগে সকাল ৯টার দিকে বেদকাশী বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ওই কেন্দ্রের বাইরে আনসার সদস্যরা পাশাপাশি বসে গল্প করছেন। পুরুষ ও নারী ভোটারদের লাইন একেবারে ফাঁকা। আনসার সদস্য ইয়াসিন হাবিব বলেন, ‘সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতেছি। এখনো কেন্দ্রে সে রকম ভোটার আসা শুরু করেনি। মানুষজন কম আসছে বলে আমরাও বসে রয়েছি। কোনো গ্যাঞ্জাম নেই।’

বেদকাশী বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে ফেরার পথে ৩ নম্বর কয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মনীশ কুমার রায় বলেন, ভোটকেন্দ্রটিতে মোট ভোটার ১ হাজার ৯৩৩ জন। সকাল ৯টা পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন ৪৫ জন।

কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ও কয়রা সদর ইউনিয়নের সাতটি ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, ভোটকেন্দ্রগুলোয় সকাল থেকেই ভোটারদের উপস্থিতি তেমন নেই। তবে আশা করা হচ্ছে, দুপুরের পর কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে।

নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নয়জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তারিক-উজ-জামান বলেন, সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কয়রা উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫৩৬ জন। সকাল থেকে উপজেলার ৬৭টি কেন্দ্রে ৪৮৬টি বুথে ৬৭ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৪৮৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ৯৭৩ জন পোলিং এজেন্ট দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথম দুই ঘণ্টায় ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভোট পড়েছে।