রোগী কমলেও বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ে উদ্বেগ

সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বেওয়ারিশ কুকুর নিধনে অভিযান চালালেও এখন নিষেধাজ্ঞা থাকায় কুকুর নিধন বন্ধ রয়েছে। এতে উৎপাত বেড়েছে।

সিলেটে ২০২০ সালে দুজন জলাতঙ্ক রোগী শনাক্ত করা হয়েছিল। এরপর গত দুই বছরে জলাতঙ্কে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। জলাতঙ্কে আক্রান্ত না হলেও সিলেটে কুকুর, বিড়াল ও বানরের আক্রমণ, আঁচড় কিংবা কামড়ের ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। সেই সঙ্গে বেড়েছে শহরে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যাও।

আজ বুধবার বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। দিবসটির এবারের মূল প্রতিপাদ্য ‘মৃত্যু আর নয়, সবার সঙ্গে সমন্বয়’। আক্রান্ত রোগী পানি দেখে বা পানির কথা মনে পড়লে প্রচণ্ড আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বলে এই রোগের নাম হয়েছে জলাতঙ্ক। এটি প্রাণিবাহিত র‌্যাবিস ভাইরাসঘটিত রোগ, রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর আক্রান্ত রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এ রোগ ভাইরাসজনিত। এটি প্রাণী থেকে মানুষে ছড়ায়। এ রোগে মৃত্যু অনিবার্য হলেও শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য।

সিলেট নগরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেওয়ারিশ কুকুরের ধাওয়ার শিকার হচ্ছে নগরের বাসিন্দারা। দুপুর থেকে শুরু করে গভীর রাত বা ভোর—সর্বদাই ঘুরে বেড়ায় এসব বেওয়ারিশ কুকুর। আগে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বেওয়ারিশ কুকুর নিধনে অভিযান চালালেও এখন নিষেধাজ্ঞা থাকায় কুকুর নিধন বন্ধ রয়েছে। এতে উৎপাত বেড়েছে। নগরের প্রতি পাড়া-মহল্লায় রাতে ফেরা মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।

নগরের শেখঘাট এলাকার বাসিন্দা বিপ্লব চক্রবর্তী (২৭) লামাবাজার এলাকায় মুদিদোকান পরিচালনা করেন। প্রতি রাতে মোটরসাইকেলে করে তিনি বাসায় ফেরেন। ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে তিনি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফেরার পথে মোটরসাইকেলের পিছু নেয় সাত-আটটি বেওয়ারিশ কুকুর। একপর্যায়ে মোটরসাইকেল উল্টে গিয়ে সড়কে পড়ে যান বিপ্লব। এ সময় পায়েও কামড় বসায় একটি কুকুর। একপর্যায়ে রাস্তায় চলাচল করা মানুষ এগিয়ে এলে কুকুরগুলো পালিয়ে যায়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নাজিফা আক্তার (২২) বলেন, সড়কে চলাচল করতে গিয়ে হঠাৎ থমকে দাঁড়াতে হয়। অনেক সময় পথ আগলে থাকে একাধিক বেওয়ারিশ কুকুর। জিব বের করা কুকুরগুলো দেখেই ভয়ে থমকে যেতে হয়। এ সময় পথচারী কিংবা আশপাশের কেউ অভয় না দিলে চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে।

টিকায় অবহেলা নয়

সাধারণত জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই রোগী মারা যায়। কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে না। কিছু উপশম প্রশমনের চিকিৎসা ছাড়া জলাতঙ্কের বিরুদ্ধে তেমন কার্যকর কোনো চিকিৎসা নেই। তবে জলাতঙ্কের বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা রয়েছে, যা রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে শরীরে প্রয়োগ করতে পারলে মৃত্যু এড়ানো যায়।

সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরে সিলেটে জলাতঙ্কে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে কুকুর, বিড়াল, বানর, শিয়াল, বেজি ও বন্য প্রাণীর কামড় কিংবা আঁচড়ে আক্রান্ত অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা ও র‌্যাবিস টিকা নিচ্ছে। সরকারিভাবে র‌্যাবিস টিকা পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারিভাবেও র‌্যাবিস টিকা সহজলভ্য। কুকুর দেখলে আচমকা দৌড় না দেওয়া, অযথা উত্ত্যক্ত না করা, অসুস্থ কুকুর দেখলে সাবধান হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া কুকুর কিংবা বিড়াল কামড় দিলে ১৫ মিনিট সাবান ও পানি দিয়ে ক্ষত স্থান ধুয়ে দিলে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হওয়ার ৭০ শতাংশ ঝুঁকি কমে। এরপরও জলাতঙ্কের টিকা নিতে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত বলেন, সিলেটে সরকারিভাবে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে র‌্যাবিস ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চার ডোজ র‌্যাবিস ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে থাকে।

শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে হাসপাতালটিতে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ১১৫ জনকে র‌্যাবিস ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আগস্ট মাসে দেওয়া হয়েছে ১০০ জনকে এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে র‌্যাবিস ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে ৩৭ জনকে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের পর থেকে নিষেধাজ্ঞার কারণে বেওয়ারিশ কুকুর নিধন বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া বংশবিস্তার রোধ করতে টিকা দেওয়া কিংবা চেতনানাশক দেওয়ার প্রতিও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে জলাতঙ্ক প্রতিরোধে গত বছর সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ১৭ হাজার বেওয়ারিশ কুকুরকে টিকা দেওয়া হয়েছে।

সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রুস্তম আলী বলেন, গত বছর কুকুরকে টিকা দেওয়ার কার্যক্রম চালানো হয়েছে। তবে এবার সে রকম কোনো প্রকল্প এখনো নেওয়া হয়নি। জলাতঙ্ক প্রতিরোধে গৃহপালিত কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রতি জোর দিয়ে তিনি বলেন, গৃহপালিত কুকুরগুলোকে অবশ্যই টিকা দেওয়া প্রয়োজন।