বাবার বাড়িতে ‘বেড়াতে যাওয়ায়’ স্ত্রীর শরীরে ২৭টি কোপ

বরগুনার আমতলী উপজেলায় বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে শাহনাজ বেগম (৩৫) নামের এক গৃহবধূকে হত্যার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। নিষেধ উপেক্ষা করে ‘বাবার বাড়িতে মাকে দেখতে যাওয়ায়’ ওই নারীর শরীরে ২৭টি কোপ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলার ঘোপখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে প্রথমে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর অভিযুক্ত স্বামী মাহতাব হাওলাদারকে ওই এলাকা থেকে আটক করে হেফাজতে নেয় পুলিশ।

আহত শাহনাজ বেগম উপজেলার ঘোপখালী গ্রামের মাহতাব হাওলাদারের স্ত্রী এবং পাশের তালতলী উপজেলার ছোটবগি ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের প্রয়াত নয়া গাজীর মেয়ে। শাহনাজ-মাহতাব দম্পতির সংসারে তিনটি সন্তান আছে। সাংসারিক বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঝামেলা চলছিল।

পুলিশ, ভুক্তভোগীর স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে পারিবারিক কলহের জেরে বাবার বাড়িতে চলে যান শাহনাজ বেগম। তখন তাঁর স্বামী মাহতাব হাওলাদার তাঁর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ তুলে থানায় একটি মামলা করেন। তখন বাবার বাড়িতে থাকতে স্বামীর বিরুদ্ধে পাল্টা যৌতুকের মামলা করেন শাহনাজ। পরে সালিসের মাধ্যমে মামলা উঠিয়ে তাঁরা আবার সংসার শুরু করেন। ওই ঘটনার পর থেকে শাহনাজকে বাবার বাড়িতে যেতে দিতেন না মাহতাব। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার মাকে দেখতে বাবার বাড়িতে যান শাহনাজ। এতে ক্ষুব্ধ হন স্বামী মাহতাব। পরদিন বুধবার বাড়িতে ফিরলে গভীর রাতে তাঁর ওপর হামলা করেন মাহতাব। তিনি ধারালো অস্ত্র দিয়ে শাহনাজের মাথা, মুখ, হাত, পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ২৭টি কোপ মারেন। পরে মৃত ভেবে তাঁকে ফেলে পালিয়ে যান।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্থানীয় লোকজন ও স্বজনদের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তারা মুমূর্ষু অবস্থায় শাহনাজকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। হাসপাতালের চিকিৎসক আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। ঘটনার পর অভিযুক্ত মাহতাবকে আটক করে পুলিশ।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা লুনা বিনতে হক বলেন, ওই নারীর মাথা, মুখ, হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন আছে। তাঁকে মুমূর্ষু অবস্থায় বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আহতের মামা নাসির হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাগনি তাঁর বাবার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর স্বামী ও স্বজনেরা ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা, মুখ, হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কুপিয়েছে। মোট ২৭টি কোপ মেরেছে। মৃত ভেবে ফেলে যায়। তাঁকে মূলত হত্যার জন্য এভাবে কুপিয়েছে। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

ঘটনার পরপরই পুলিশ অভিযুক্ত মাহতাব হাওলাদারকে আটক করে। পুলিশের হেফাজতে থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, মুমূর্ষু অবস্থায় ওই নারী পড়ে আছেন। পরে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী মাহতাবকে বাড়ির পাশ থেকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।