জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হারিয়েও আলোচনায় ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী। প্রায় ১৬ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। জেলা শহর থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ছিল তাঁর অনুসারীদের প্রভাব। তাঁকে কোণঠাসা করতে দলের একটা অংশ দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছিল। তারা অনেকটাই সফল। জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ পাননি ফারুক। অবশ্য তাঁর পদ হারানোর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তিতে ভাটা পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন দলটির অনেক নেতা।
ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরীর পদ হারানোর খবরে শহর থেকে তৃণমূল পর্যন্ত চলছে নানা আলোচনা। তার প্রভাব পড়ে সম্মেলনেও। সম্মেলনে লোক সমাগম ঘটাতে ব্যর্থ হয় জেলা আওয়ামী লীগ। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগে ভাঙনের সুর দেখছেন অনেক নেতা। তবে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বাদ গেলেও তাঁকে নতুন কমিটির সহসভাপতি করা হয়েছে।
বিভিন্ন সময় নানা ইস্যুতে আলোচনায় এসেছেন ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী। ২০১৬ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন না পেয়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেন তিনি। নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও হন। ওই নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়াটাই তাঁর বড় ভুল ছিল বলে মনে করেন অনেক নেতা। তাঁর সম্পাদক পদ হারানোর অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে প্রধান কারণ মনে করা হয় ওই বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘটনাকে।
জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং বিশাল লোক সমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। হঠাৎ গত শনিবার রাতে জেলায় খবর ছড়িয়ে পড়ে, সাধারণ সম্পাদক পদে আসছেন না ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী। এর পর থেকে সম্মেলনে উৎসাহ-উদ্দীপনার ভাটা পড়ে। ফারুক ও তাঁর অনুসারীদের কোনো কিছুতে দেখা যাচ্ছিল না। গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এর প্রভাব পড়ে। সম্মেলনে লোক সমাগম হয়নি। সম্মেলনের দিন সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পুরো মাঠ ছিল ফাঁকা। এরপর কর্মী-সমর্থকেরা এলেও তা আশানুরূপ ছিল না।
পরে বেলা দুইটার দিকে ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরীকে সম্মেলনে নিয়ে আসা হয়। তাঁর সঞ্চালনার মধ্য দিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তবে তিনি বেশিক্ষণ সঞ্চালনা করেননি। পরে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে জেলা আওয়ামী লীগের পুরোনো কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি আগামী তিন বছরের জন্য নতুন তিন সদস্যের কমিটির নেতাদের নাম ঘোষণা করেন। ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরীর নাম সহসভাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরীর অনুপস্থিতি সংগঠনের সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল করে ফেলতে পারে। যেকোনো পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেওয়ার দক্ষতা তাঁর ছিল। এর ফলে অনেক সাংগঠনিক বিষয় দ্রুত সমাধান হয়ে যেত। এ ছাড়া তৃণমূলের নেতাদের তিনি ভালোভাবে মূল্যায়ন করতেন।
ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী বলেন, ‘দলের দুঃসময়ে নেতৃত্ব দিয়েছি। শক্ত হাতে দল চালানোই আমার কাল হয়েছে। অনেক আগে থেকেই স্থানীয় রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র চলছিল আমার বিরুদ্ধে। দলকে সুসংগঠিত করতে, অনেক সংসদ সদস্যের অনৈতিক আবদার রাখতে পারিনি। এর ফলে কয়েকজন সংসদ সদস্যও আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। আমার বিরুদ্ধে তাঁরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অপপ্রচার করেছেন। আমি এই পদে না থাকায় যাঁদের লাভ হবে, তাঁরাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। তবে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, তৃণমূল আমার সঙ্গে আছে। আমার পদ হারানোর খবরে নেতা-কর্মীরা অনেকটাই ভেঙে পড়েন। যে কারণে সম্মেলনেও লোক সমাগমে ভাটা পড়ে। তবে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিতে আমি কাজ করে যাব।’