‘আমার মেয়েরে যারা মারল, তাদের যেন ফাঁসি হয়’
‘আমার বুকটা শূন্য অইয়া গেছে। আমার মনডারে কোনোভাবেই বুঝাইবার পাইতাছি না। জমি নিয়া আমগর লগে ঝগড়া আছিল। কিন্তু কী দোষ ছিল আমার দুধের শিশুর। যারা আমার কলিজার জানটারে হত্যা করল। তাগর আমি বিচার চাই। আমার মেয়েরে যারা মারল, তাদের যেন ফাঁসি হয়।’ প্রতিপক্ষের হাতে নিহত পাঁচ মাসের শিশু আদিবার মা ফাতেমা বেগম (৪৫) নিজ বাড়িতে আজ রোববার দুপুরে এভাবেই বিলাপ করছিলেন।
ফাতেমা বেগম শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের ময়ছর উদ্দিনের স্ত্রী। এ দম্পতির ছয় সন্তানের মধ্যে আদিবা ছিল সবার ছোট। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের একজন গত শুক্রবার বিকেলে ওই গ্রামে ফাতেমা বেগমের কোল থেকে আদিবাকে কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়। সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় আদিবার। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ওই গ্রামে আদিবাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে ময়ছর উদ্দিন বাদী হয়ে তাঁর ভাতিজা হামিদুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে নালিতাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন। হামিদুল ইসলামের মা হনুফা বেগম ও স্ত্রী লাভলী বেগমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল তাঁদের আদালতের মাধ্যমে শেরপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁরা দুজন আদিবার হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ময়ছর উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর ভাতিজা প্রতিবেশী হামিদুল ইসলামের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। কয়েক দিন আগে গ্রাম্য সালিসে জমির সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। শুক্রবার দুপুরে ময়ছর তাঁর বাড়ির সীমানায় টিন দিয়ে বেড়া দিয়ে দেন। পরে বিকেলে ময়ছর নিজেদের সীমানায় কলার চারা রোপণ করতে যান। এ সময় ফাতেমা বেগমের কোলে ছিল শিশু আদিবা। তখন হামিদুলের মা হুনুফা ও স্ত্রী লাভলী বেগম চারা রোপণ করতে বাধা দেন। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে দেশি অস্ত্র নিয়ে হামিদুলও যোগ দেন ঝগড়ায়। উভয় পক্ষে হাতাহাতি হয়। ফাতেমার কোলে থাকা আদিবাকে কেড়ে নিয়ে মাটিতে ছুড়ে মারেন লাভলী। এতে শিশুটির মাথায় আঘাত লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় শিশুটিকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক তাকে শেরপুর সদর হাসপাতালে পাঠান। শেরপুরে নেওয়ার পথে তিনানী বাজার এলাকায় সন্ধ্যায় আদিবার মৃত্যু হয়।
আজ দুপুরে কান্দাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মেয়েকে হারিয়ে বিলাপ করে কাঁদছেন মা ফাতেমা বেগম। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন দুই মেয়ে মৌতুসী ও মলিনা। ঘরের পাশে লিচুগাছের নিচে বসে কাঁদছেন আদিবার দাদি মরিয়ম বেগম (৬৮)। তাঁদের দেখতে ভিড় করেছেন এলাকার নারীরা।
আদিবার দাদি মরিয়ম বেগম বলেন, ‘মারামারি করার ইচ্ছা থাকলে তো আর আমার নাতনিটারে কোলে নিয়া গাছ লাগাইবার যাইত না। আমার দুধের নাতনিরে যারা মারল, সরকার যেন অগরে ফাঁসি দেয়।’
হামিদুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ঘরে তালা দেওয়া। মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও হামিদুল ইসলামের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার দুই নারী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।