চা‌র দিনের সরকারি ছুটি, সিলেটে খালি নেই হোটেল-মোটেল

টানা চার দিনের ছুটিতে সিলেটের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানেছবি: আনিস মাহমুদ

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন নোমান আজম (৩৩)। বাড়ি নোয়াখালীতে হলেও পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকায়। বিয়ে করেছেন চার মাস আগে। বিয়ের পর বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল সিলেটে। তবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় আর স্ত্রীকে নিয়ে সিলেটে বেড়াতে যেতে পারেননি।

চার দিনের বন্ধ পেয়ে আবার সিলেটে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন নোমান। এ জন্য সিলেটের বাসিন্দা মোয়াজ্জেম হোসেনকে আবাসিক হোটেল ভাড়া নিতে বলেছিলেন। আজ বুধবার তাঁর (নোমান) হোটেলে ওঠার কথা। কিন্তু মোয়াজ্জেম সিলেটের পাঁচটি আবাসিক হোটেল ঘুরেও কোথাও ভালো মানের কক্ষ পাননি।

নগরের মাছুদিঘির পাড় এলাকায় একটি হোটেল ভাড়া নিতে গিয়ে কথা হয় মোয়াজ্জেমের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচটি হোটেলে গিয়ে খবর নিয়েছেন। কিন্তু কোথাও কোনো কক্ষ পাননি। কক্ষ না পেয়ে এখন বেকায়দায় পড়েছেন তিনি।

মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, একটি পাঁচ তারকা মানের হোটেলে চারজনের একটি কক্ষ পেয়েছিলেন। তবে সেটির ভাড়া প্রায় ১৯ হাজার। এত দামে এক রাতের জন্য ভাড়া দিয়ে থাকা সম্ভব নয়। এখন পরিচিত আরও কয়েকটি হোটেলে খবর নিচ্ছেন। বেলা দুইটা পর্যন্ত বৃহস্পতিবারের পরে কোনো কক্ষ পাচ্ছেন না তিনি।

পূজার ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে চা-বাগানে ঘুরছেন অনেকে। গতকাল মঙ্গলবার সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানে
ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটের হোটেলমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেটে গত দুই বছরের মধ্যে এবার হোটেল-মোটেল ব্যবসা চাঙা হচ্ছে। সামনে লম্বা ছুটি থাকায় সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ঢল নামবে। এ ছাড়া সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চলমান টি-টোয়েন্টি নারী এশিয়া কাপও প্রভাব ফেলেছে হোটেলগুলোতে। সব মিলিয়ে সিলেটের হোটেল-মোটেলগুলো ব্যস্ত সময় পার করছে।

নগরের জিন্দাবাজার এলাকার গোল্ডেন সিটি হোটেলের ব্যবস্থাপক মৃদুল কান্তি দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার থেকে হোটেলের বেশির ভাগ কক্ষ বুকিং করা। পর্যটকদের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। মঙ্গলবার বেলা দুইটা পর্যন্ত হোটেলের প্রায় ৭৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। আশা করা যাচ্ছে, করোনা ও বন্যার প্রভাব কাটিয়ে সিলেটে পর্যটকদের সরব উপস্থিতি থাকবে।

সিলেটের হোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি সুমাত নূরী জুয়েল বলেন, হোটেল-মোটেলগুলো ভরপুর পর্যটক পাচ্ছে। সিলেটে নারী এশিয়া কাপ আয়োজন বড় একটি কারণ। সব মিলিয়ে এবার চার দিনের ছুটিতে পর্যটকদের সরব উপস্থিতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তাঁর পরিচালিত নগরের নাইওরপুল এলাকার ফরচুন গার্ডেন হোটেলের প্রায় সব কটি কক্ষ ইতিমধ্যে রিজার্ভ হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ার সাদাত প্রথম আলোকে বলেন, আগামী কয়েক দিন সরকারি ছুটিতে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের সমাগম বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। পর্যটনকেন্দ্রগুলো নির্বিঘ্ন রাখতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটকদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।