মেয়েকে বাঁচাতে মানুষের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন মা–বাবা

মায়ের কোলে ব্রেন সিস্টে আক্রান্ত বৃষ্টি শীল
ছবি: প্রথম আলো

সংসার চালাতে যেখানে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়, সেখানে শিশুকন্যা মস্তিষ্কের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় অকুল পাথারে পড়েছেন কণা রানী শীল ও বুদ্ধিশ্বর শীল। দারিদ্র্যপীড়িত জীবনের বাস্তবতা তাঁদের এতটা নির্মমভাবে বেঁধে রেখেছে যে মেয়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে এখন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন এই দম্পতি।

কণা রানী শীল ও বুদ্ধিশ্বরের বাড়ি পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার চকভরিয়া গ্রামে। তাঁদের আট বছর বয়সী মেয়ে বৃষ্টি রানী শীল ব্রেন সিস্টে আক্রান্ত। চিকিৎসক জানিয়েছেন, বৃষ্টির মস্তিষ্কে দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। তবে এর জন্য খরচ অনেক। দরিদ্র দম্পতি কণা রানী ও বুদ্ধিশ্বরের পক্ষে যার জোগান দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

কণা রানী কাঁদতে কাঁদতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়েটার এমন অবস্থা হইছে যে তীব্র মাথাব্যথায় সারা সময় ও ছটফট আর কান্নাকাটি করে। ডাক্তার স্যাররা কইছে এই রোগের অপারেশনে নাকি ম্যালা টাকা লাগবি। কিন্তু এত টাকা আমি কনে পাব। সাহায্যের জন্য আমি আর ওর বাবা বিভিন্ন বাড়িতে যায়া কান্নাকাটি করতেছি। আমার মেয়েটাকে বাঁচানোর জন্য কি কেউ নাই?’

কণা রানী শীল ও বুদ্ধিশ্বর শীল সংসারে তিন মেয়ে আছে তাঁর। বুদ্ধিশ্বর শীল অন্যের সেলুনে চুল কাটার কাজ করেন। সেখান থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। এই আয়ে সংসার চলে না বলে কণা রানী অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। এরপরও যা আয় হয়, তাতে পরিবারের সবার তিনবেলা খাবার ঠিকমতো জোটে না। এর মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে বৃষ্টির চিকিৎসা। ফলে মা কণা রানী শীল ও বাবা বুদ্ধিশ্বর শীল মেয়েকে নিয়ে সাহায্যের আশায় বাড়ি বাড়ি ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু যে সাহায্য তাঁরা পাচ্ছেন, তা একেবারেই অপ্রতুল।

অসুস্থ বৃষ্টি রানী শীল উপজেলার আবদুস সামাদ মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনজুর হাসান বলেন, ‘মেয়েটা পড়ালেখায় খুব ভালো। কিন্তু মস্তিষ্কের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে আমাদের চোখের সামনে সে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমি নিজেও ওর চিকিৎসার সাহায্যের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিচ্ছি।’

বৃষ্টি রানীর মস্তিষ্কের রোগের চিকিৎসা করেছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ও শিশুরোগবিশেষজ্ঞ মো. জহুরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুটিকে আমি কিছুদিন চিকিৎসা করেছি। এমআরআই রিপোর্ট অনুযায়ী সে ব্রেন সিস্ট বা একধরনের ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের মতো বড় কোনো হাসপাতালে তার অপারেশন হলে ভালো হয়।’

শিশু বৃষ্টি রানীর চিকিৎসার জন্য সমাজের হৃদয়বান মানুষদের কাছে সাহায্য চেয়েছে তার পরিবার। সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: বুদ্ধিশ্বর শীল, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর: ০১০০২৪৫৩৩৬৫৭২, জনতা ব্যাংক, কাশিনাথপুর শাখা, পাবনা। এ ছাড়া বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানো যাবে ০১৭২৪-৬৮২৮১১ নম্বরে।