নোয়াখালীতে স্ত্রীর গলাকাটা লাশ, পাশে ঝুলন্ত স্বামী

আহাজারি করছেন স্বজনেরা। সোমবার সকালে নোয়াখালী জেলা শহরের মাইজদী এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীর মাইজদী এলাকায় একটি ভাড়া বাসার খাটের ওপর পড়ে ছিল স্ত্রীর গলাকাটা লাশ। লাশটির পাশে ছিল রক্তমাখা একটি বঁটি। আর স্বামীর লাশটি ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লাশ দুটি উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রীকে হত্যা করে স্বামী আত্মহত্যা করেছেন।

লাশ উদ্ধার হওয়া দুজন হলেন মেহেদী হাসান ওরফে শুভ (২২) ও তাঁর স্ত্রী নাম তামান্না ইসলাম (১৮)। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। রক্তমাখা বঁটি আলামত হিসেবে জব্দ করেছে পুলিশ। মেহেদী ও তামান্না সদর উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের বাসিন্দা। তবে তামান্নার বাবা জাকের হোসেনের ভাড়া নেওয়া ওই বাসায় সবাই মিলে থাকতেন।

তামান্নার বড় ভাই হোসাইন আহম্মেদ ওরফে নোমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ১৪ মাস বয়সী ছোট ভাই আবদুল্লাহ আল-মারুফ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় গতকাল রোববার সকালে তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ছোট ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর মা-বাবাও হাসপাতালে যান। গতকাল দিবাগত রাত একটার দিকে তিনি খাওয়া শেষে ছোট বোন ও তাঁর স্বামীকে বাসায় রেখে হাসপাতালে যান। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে দরজায় শব্দ করেন। কেউ দরজা খুলছিলেন না। ডাকাডাকির পরও বোন-ভগ্নিপতির কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে তিনি পাশের ভবনের ছাদে গিয়ে লাঠি দিয়ে জানালার গ্লাস খুলে দেখতে পান, বিছানার ওপর তাঁর ভগ্নিপতির লাশ ঝুলছে। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে।

হোসাইন আহম্মেদের ভাষ্য, প্রায় পাঁচ-ছয় মাস আগে তাঁরা ওই ভাড়া বাসায় ওঠেন। তাঁর ছোট বোন তামান্না প্রেম করে প্রায় বছরখানেক আগে খালাতো ভাই মেহেদীকে পালিয়ে বিয়ে করেন। প্রাথমিকভাবে পরিবার বিষয়টি মেনে নেয়নি। মাসখানেক আগে থেকে তাঁর বোন স্বামীকে নিয়ে বাবার বাসায় আছেন। এর মধ্যে তাঁর বাবা ভগ্নিপতি মেহেদীকে মাইজদী পৌর বাজারের একটি মুদিদোকানে চাকরি নিয়ে দেন। বোন ও ভগ্নিপতির মধ্যে কখনো ঝগড়া-বিবাদের কথা শোনেননি। ঠিক কী কারণে এ ঘটনা ঘটল, তিনি বুঝতে পারছেন না।

পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা পারভীন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত মেহেদী হাসানের ফোন নম্বর বন্ধ পেয়ে হাসপাতাল থেকে তামান্নার মা তাঁকে (পারভীনকে) ফোন করে কলিং বেল চেপে তাঁদের জাগিয়ে দিতে বলেন। তিনি কয়েকবার কলিং বেল চাপলেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে ঘটনাস্থলে আসেন তামান্নার ভাই হোসাইন আহম্মদ।

সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর জাহেদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দাম্পত্য কলহের কারণে স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামী আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার সময় স্বামী-স্ত্রী ছাড়া আর কেউ বাসায় ছিলেন না। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।