শাশুড়িকে গলাকেটে হত্যার পর মৃত ভেবে পুত্রবধূকে রেখে পালাল ডাকাত দল

হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে স্বজন ও আশপাশের লোকজন বাড়িতে ভিড় করেন। আজ শুক্রবার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খালকুলা গ্রামেছবি: প্রথম আলো

ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় বাড়িতে ডাকাতি করতে এসে প্রবাসীর স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় প্রবাসীর পুত্রবধূর গলাকেটে হত্যার চেষ্টা করা হয়। পরে পুত্রবধূকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায় ডাকাতেরা। আজ শুক্রবার ভোরে উপজেলার খালকুলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত নারীর নাম ফাতেমা বেগম (৪৫)। হামলার শিকার তাঁর পুত্রবধূ হলেন বিথি খাতুন (১৮)। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সাগর (২৯) ও সুশান্ত (৪০) নামের দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। সাগরের বাড়ি পাশের দুর্গাপুর গ্রামে এবং সুশান্তর বাড়ি পশ্চিম ঝিনাইদহ গ্রামে। তাঁরা ওই বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ করেছিলেন।

স্বজন, প্রতিবেশী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন শাশুড়ি ফাতেমা বেগম ও তাঁর পুত্রবধূ বিথি খাতুন। ফাতেমার স্বামী আবেদ আলী পাঁচ বছর ধরে দুবাই রয়েছেন। তাঁদের ছেলে ও বিথির স্বামী আট মাস আগে মালয়েশিয়া গেছেন। গতকাল রাতের কোনো এক সময় হঠাৎ রাস্তার পাশে ঘরের বারান্দার গ্রিলের নিচে শাবল দিয়ে কিছু ইট কাটে ডাকাত দল। এরপর তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। ডাকাতেরা ধারালো অস্ত্রের মুখে ফাতেমা ও বিথিকে জিম্মি করে। টাকা ও স্বর্ণালংকার বের করে দিতে ডাকাতেরা তাঁদের ওপর জোরজুলুম শুরু করে।

একপর্যায়ে ডাকাতেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ফাতেমাকে খাটের ওপর ফেলে গলাকেটে হত্যা করেন। পরে তাঁরা বিথির গলা কাটে। একপর্যায়ে বিথিকে মৃত ভেবে ডাকাত দল পালিয়ে যায়। ভোরের দিকে ঘরের দরজা খুলে বিথি প্রতিবেশী ওবায়দুর রহমানের বাড়ির উঠানে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ওই বাড়ির লোকজন বিথিকে রক্তাক্ত দেখে ঘটনার বিষয় জানতে চান। বিথি এ সময় কথা বলতে পাচ্ছিলেন না। পরে চিরকুটে লিখে জানান, তাঁদের বাড়িতে কাজ করা রাজমিস্ত্রিরা ডাকাতি করতে এসে তাঁর শাশুড়িকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। আর তাঁর গলাকেটে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।

প্রতিবেশী ওবায়দুর রহমান বলেন, ফজরের আজানের পর তিনি বাড়ির পাশেই ছিলেন। বিথি হঠাৎ এসে উঠানে পড়ে যান। বাড়ির নারীরা তাঁকে রক্তাক্ত দেখে ভয়ে চিৎকার দেন। পরে বিথিকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।

সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাপস কুমার বিশ্বাস বলেন, বিথিরও গলা অনেকটাই কেটে গেছে। তাঁর হাতেও হালকা ক্ষত আছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় আজ সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার আজিম-উল-আহসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মীর আবিদুর রহমান, সদর থানার ভারাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন উদ্দিনসহ পুলিশের কর্মকর্তারা।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসআই মো. আমিরুজ্জামান বলেন, বিথির লেখা চিরকুট দেখে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়েছে। আটক দুজন পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, টাকা লুটের জন্যই তাঁরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঘটনার সময় লুট হওয়া সাড়ে চার হাজার টাকা ও তিনটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা। নিহত নারীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।