ভৈরব নদে ডুবে যাওয়া দুটি জাহাজ থেকে কয়লা অপসারণ শুরু

যশোরের অভয়নগরে ভৈরব নদে ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজ থেকে কয়লা অপসারণ করা হচ্ছে। শুক্রবার বিকেলে উপজেলার ভাটাপাড়া এলাকায় নদে।ছবি: প্রথম আলো

যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ভৈরব নদে ডুবে যাওয়া কয়লাবোঝাই দুটি কার্গো জাহাজ থেকে কয়লা অপসারণ শুরু হয়েছে। একটি জাহাজ থেকে গত বুধবার ও অন্য জাহাজ থেকে আজ শুক্রবার দুপুরে বড় পাইপের মাধ্যমে বাল্কহেডে ভরে কয়লা অপসারণ শুরু করা হয়।

ভৈরব নদে এক মাসে কয়লাবোঝাই তিনটি কার্গো জাহাজ ডুবে যায়। ভাটার সময় তলা ফেটে দুটি কার্গো জাহাজ নদের পানিতে ডুবে যায়। আর ভাটার সময় এক পাশে কাত হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের পানি ঢুকে অন্য কার্গো জাহাজটি ডুবে যায়। এর মধ্যে একটি জাহাজ আগেই পানির নিচ থেকে তোলা হয়েছে। কয়লা অপসারণের পর অন্য দুটি জাহাজ পানির ওপর ভেসে উঠবে।

গত ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে অভয়নগর উপজেলার দেয়াপাড়া এলাকায় ভৈরব নদে ‘এমভি আর রাজ্জাক’ নামে কয়লাবোঝাই একটি জাহাজ ডুবে যায়। জাহাজে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা ৮২০ মেট্রিক টন কয়লা ছিল। ডুবে যাওয়ার সাত দিন পর জাহাজটি পানি থেকে তোলা হয়।

এমভি আর রাজ্জাক জাহাজের মাস্টার মো. মুরাদ হোসেন বলেন, দেয়াপাড়া এলাকায় ভৈরব নদের ঘাটে পাঁচ দিন ধরে নোঙর করা ছিল জাহাজটি। ভাটার সময় নদে পানি কমে গেলে তলা ফেটে জাহাজে পানি উঠতে শুরু করে। জোয়ার এলে ধীরে ধীরে জাহাজটি নদের পানিতে তলিয়ে যায়। পরে কয়লা অপসারণ করে জাহাজটি তোলা হয়।

১৩ জানুয়ারি বিকেলে উপজেলার ধুলগ্রাম এলাকায় ভৈরব নদে এমভি মৌমনি-১ নামের কয়লাবোঝাই আরেকটি কার্গো জাহাজ তলা ফেটে ডুবে যায়। জাহাজে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা ৭০০ মেট্রিক টন কয়লা ছিল। সর্বশেষ গত সোমবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলার ভাটপাড়া এলাকায় নদে কয়লাবোঝাই এমভি পূর্বাঞ্চল-৭ কার্গো জাহাজটি কাত হয়ে পানি ঢুকে ডুবে যায়। জাহাজটিতে প্রায় ৮০০ মেট্রিক টন কয়লা ছিল।

আজ শুক্রবার বিকেলে নদের ধুলগ্রাম ও ভাটপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ডুবে যাওয়া জাহাজ দুটি থেকে কয়লা অপসারণ করা হচ্ছে। ছোট লঞ্চে স্থাপন করা বড় একটি পাম্প মেশিন ও বালুবাহী বাল্কহেড আনা হয়েছে। পাম্প মেশিন থেকে দুটি বড় প্লাস্টিকের পাইপ জাহাজের কয়লার মধ্যে ঢুকিয়ে অন্য একটি পাইপ বাল্কহেডে দেওয়া হয়েছে। পাম্প মেশিনের মাধ্যমে পাইপ দিয়ে পানির সঙ্গে কয়লা উঠছে এবং তা অপর পাইপ দিয়ে বাল্কহেডে গিয়ে পড়ছে।

এমভি মৌমনি-১ জাহাজের মাস্টার মো. সেলিম মিয়া বলেন, ১৩ জানুয়ারি বিকেলে ভাটার সময় তলা ফেটে জাহাজটি ডুবে যায়। পাঁচ দিন পর গত বুধবার দুপুর থেকে জাহাজ থেকে কয়লা অপসারণের কাজ শুরু হয়। ১২-১৩ জন কাজ করছেন। সব কয়লা অপসারণ করতে আরও ৮-১০ দিন লেগে যাবে। এরপর মেশিনের মাধ্যমে পাইপ দিয়ে ভেতর থেকে পানি সেচার পর জাহাজ ভেসে উঠবে।

অন্য জাহাজটির মাস্টার মফিজুর রহমান বলেন, ভাটপাড়া এলাকায় নদের ঘাটে ১১ দিন জাহাজটি বাঁধা ছিল। সোমবার রাতে ভাটার সময় জাহাজটি কাত হয়ে যেতে থাকে। পরে জোয়ারের পানি উঠে জাহাজটি ডুবে যায়। আজ দুপুর থেকে জাহাজটি থেকে বাল্কহেডে কয়লা অপসারণ শুরু হয়েছে। কয়লা অপসারণ করে জাহাজটি তুলতে ১০-১২ দিন সময় লাগবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ধারাবাহিকভাবে নিয়মিত খনন না করায় গুরুত্বপূর্ণ নওয়াপাড়া চ্যানেলের নাব্যতা–সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। ভৈরব নদে অবস্থান করা পণ্যবোঝাই কার্গো জাহাজগুলো পণ্য খালাসের অপেক্ষায় নদের কিনারে বড় বড় রশি দিয়ে গাছ বা পিলারের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। ভাটার সময় নদে পানি কমে গেলে জাহাজের একটি অংশ চরে থাকে। অপর অংশ কাত হয়ে পড়ে। জাহাজগুলো পুরোনো হওয়ায় পণ্যের অতিরিক্ত ওজনের চাপ সহ্য করতে পারে না। ফলে অনেক সময় জাহাজের তলা ফেটে যায়।

বিআইডব্লিউটিএর খুলনা পশ্চিম বদ্বীপ শাখার নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আশ্রাফ উদ্দীন বলেন, ভৈরব নদে ডুবে থাকা দুটি জাহাজ তুলতে ১৫ দিন সময় বেঁধে দিয়ে জাহাজ দুটির মালিককে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে তাঁরা কয়লা অপসারণ করে জাহাজ দুটি তোলার কাজ শুরু করেছেন। বিষয়টি তাঁরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন।