ভোট চাওয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যানের বক্তব্য থামিয়ে দিলেন ইউএনও, পরে জরিমানা

কুমিল্লা জেলার মানচিত্র

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা প্রশাসন এক আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই সভায় নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চাওয়ায় দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেমের বক্তব্য থামিয়ে দেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা।

আজ শনিবার দুপুরে দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। ইউএনও পরে উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেমকে তাঁর দপ্তরে ডেকে আনেন। এরপর নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একই সঙ্গে তাঁকে সতর্ক করা হয়। আবুল কাশেম উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। কাশেম তাঁর অনুসারী বলে জানিয়েছেন দলের কর্মীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুরে উপজেলা পরিষদ হল মিলনায়তনে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন পক্ষ’ ও ‘রোকেয়া দিবস’ পালন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও জয়িতাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আবুল কাশেম।

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান বক্তব্যে বলেন, ‘এ আসনে রাজী মোহাম্মদ ফখরুল একবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, একবার স্বতন্ত্র এবং নৌকার প্রার্থী হিসেবে দুবারের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৫ বছর ধরে আপনাদের উন্নয়নে কাজ করেছেন। আগামী নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে এবং দেবীদ্বারকে স্মার্ট দেবীদ্বার হিসেবে গড়ে তুলতে নৌকার প্রার্থী রাজী মোহাম্মদ ফখরুলকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। আপনারা যাঁরা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাজী মোহাম্মদ ফখরুলকে ভোট দেবেন, তাঁরা হাত তুলে সমর্থন দেন।’

এ সময় অনুষ্ঠানের সভাপতি ও ইউএনও নিগার সুলতানা দাঁড়িয়ে আবুল কাশেমকে নির্বাচনী বক্তব্য না দিতে অনুরোধ করেন। তখন আবুল কাসেম বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করে অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় মঞ্চে অতিথি ছিলেন কুমিল্লা উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শিরিন সুলতানা, জেলা মহিলা শ্রমিক লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম, সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের সহধর্মিণী সামান্তা সৃষ্টি প্রমুখ।

এদিকে সরকারি অনুষ্ঠানে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে নির্বাচনী বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর আজ বিকেল চারটায় ইউএনও তাঁর নিজ কার্যালয়ে উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে ডেকে আনেন। ইউএনও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় আবুল কাশেমকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও সতর্ক করেন। এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হানুল ইসলামসহ অন্য কর্মকর্তারা ছিলেন।

জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, ‘আমি বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগ থেকে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে ফেলেছিলাম। এটা ঠিক হয়নি।’

এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনও নিগার সুলতানা বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করবেন, প্রমাণ পেলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি (আবুল কাশেম) সরকারি অনুষ্ঠানে একজন প্রার্থীর পক্ষে এভাবে ভোট চাইতে পারেন না। তাই তাঁকে থামিয়ে দেওয়া হয়। পরে জরিমানা ও সতর্ক করা হয়।