চালক-সহকারীর মৃত্যু যাত্রীদের পিটুনিতে হয়নি, কীভাবে হলো জানাল পুলিশ

ঢাকার অদূরে সাভারে অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ায় যাত্রীদের মারধরে চালক ও চালকের সহকারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠলেও ভিন্ন তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে পুলিশ। আশুলিয়া থানার পুলিশ বলছে, দুজনের মৃত্যু মারধরে হয়নি। বাস থেকে নেমে যাত্রী ডাকাডাকির সময় দুই বাসের মাঝখানে পড়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পুলিশ বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে।

গত সোমবার ঘটনার পরপর বাসচালকের সহকারী নিহত মো. হৃদয়ের ভাই আতিকুর রহমান দাবি করেছিলেন, ওই দিন বিকেল চারটার দিকে তিনি এ ঘটনার খবর পান। পরে বাসের চালকের আরেক সহকারীর কাছ থেকে জানতে পারেন, ইতিহাস পরিবহনে ঢাকার মিরপুর থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত ভাড়া ৮০ টাকার মতো। ঈদ উপলক্ষে ১০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছিল। একজন যাত্রী বাসে ওঠার পর ১০০ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। বাসটি আশুলিয়া থানা-সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে বাসে ২০-৩০ জন ওঠেন। বাসটি কিছুদূর গিয়ে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ডিইপিজেড) এলাকায় এসে যানজটে আটকা পড়ে। তখন হৃদয়কে বাস থেকে নামিয়ে হত্যা করা হয়। চালক সোহেল রানা ওরফে বাবুকে মারধর করা হয়। পরে দুজনকে গাজীপুরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে নেওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয়।

তবে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আশুলিয়া থানার পুলিশ জানায়, যাত্রীদের মারধরে চালক ও সহকারীর মৃত্যুর খবরের তথ্য পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে যায়। শরীরের আঘাত দেখে এবং চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে মারধরে ওই দুজনের মৃত্যু হয়েছে, এমন দাবির বিষয়ে তাদের সন্দেহ হয়। প্রকৃত ঘটনা জানতে সোমবার রাতেই পুলিশ ওই বাসের চালকের সহকারী পরিচয় দেওয়া আবদুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এক যাত্রী ও তাঁর পরিচিত ব্যক্তিদের মারধরে ওই দুজন নিহত হয়েছেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেন।

পুলিশ জানায়, তদন্ত চলাকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক প্রত্যক্ষদর্শীর মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারেন, ঘটনার সময় ইতিহাস বাসের পাশে দুজন ধাক্কাধাক্কি করছিলেন। এ সময় উত্তরবঙ্গগামী একটি বাস ইতিহাস বাসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাঝখানে ওই দুজন চাপা পড়েন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর পুলিশ গতকাল আবদুর রহমানকে আবার থানায় ডেকে নেয়। ঘটনাস্থলের পাশ থেকে সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করে পুলিশ।

আশুলিয়া থানার পুলিশ বলছে, পরেরবারের জিজ্ঞাসাবাদে আবদুর রহমান বলেন যে ঘটনার আগে কিছু সময়ের জন্য তিনি গাড়িতে চালকের আসনে বসেছিলেন। চালক ও চালকের অপর সহকারী গাড়ির গেট থেকে নেমে যাত্রীদের ডাকছিলেন। এ সময় উত্তরবঙ্গগামী একটি বাস তাঁদের দুজনকে চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ওই দুজনের মৃত্যু হয়।

দুই বাসের মাঝখানে পড়ে যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ডিইপিজেডের সামনের সড়কের পাশে ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভিড়। সড়কে গাড়িগুলো চলছে ধীরগতিতে। ইতিহাস পরিবহনের বাসটি সড়কে চন্দ্রামুখী লেনের ডান পাশ ঘেঁষে থেমে ছিল। কিছুক্ষণ পর পাশ দিয়ে ‘বাবা-মায়ের দোয়া’ নামে একটি বাস চলে যায়। এর পরপরই ইতিহাস পরিবহনের বাসের গেটটিতে লোকজনের জটলা দেখা যায়। এক পুলিশ সদস্যকে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়।

পুলিশের দাবি, ইতিহাস পরিবহনের পাশ দিয়ে বাবা-মায়ের দোয়া পরিবহনের বাস যাওয়ার সময় দুই বাসের মাঝখানে চাপা পড়ে ওই দুজন নিহত হন।

গতকাল বিকেলে আশুলিয়া থানায় কথা হয় আবদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি দাবি করেন, বেশি ভাড়া নিয়ে এক যাত্রীর সঙ্গে হৃদয়ের কথা–কাটাকাটি হয়। পরে বাসের চালক সোহেল তাঁকে কিছুক্ষণের জন্য বাসের স্টিয়ারিং ধরতে বলেন। এরপর সোহেল ও হৃদয় বাস থেকে নেমে যান। ওই সময় সেখানে ওই যাত্রীর পরিচিত আরও তিন-চারজন ছিলেন। এরপর কী হয়েছে, তিনি জানেন না।

যাত্রীরা চালক ও সহকারীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে—এমনটা কেন আগে বলেছিলেন, জানতে চাইলে আবদুর রহমান বলেন, ‘ওই সময় আমি চাপের মধ্যে ছিলাম। হৃদয়ের আত্মীয়–স্বজনেরাও বারবার জানতে চাইছিলেন, তাই এটা বলেছিলাম।’ তাহলে কীভাবে ওই দুজন মারা গেলেন, জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ধারণা করছি, সোহেল ও হৃদয় বাস থেকে নামার পর উত্তরবঙ্গের একটি বাস পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের চাপা দিয়েছে।’

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, মূলত নিজেকে আইনি জটিলতা থেকে রক্ষা করতে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন চালকের সহকারী আবদুর রহমান।