চাল পরিবহন-বিতরণে সরকারি বরাদ্দ কম

আগে এ কার্যক্রমে বরাদ্দ ছিল না। ২০২০ সাল থেকে প্রতি টনে ২৫০ টাকা পরিবহন বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

ফাইল ছবি: প্রথম আলো

উপকূলে জেলেদের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারের সহায়তার চাল সরকারি গুদাম থেকে ইউনিয়ন পরিষদের নেওয়া ও বিতরণ কাজে বরাদ্দ কম বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা। আগে এ কার্যক্রমে কোনো বরাদ্দ ছিল না। ২০২০ সাল থেকে প্রতি টনে ২৫০ টাকা পরিবহন বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

ইউপি চেয়ারম্যানরা বলছেন, এ বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। আগে তাঁদের পকেট থেকে পুরো অর্থ ব্যয় করতে হতো। কিন্তু এখন প্রতি টনে ২৫০ টাকা দিলেও স্থানভেদে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়। ইউনিয়ন পরিষদে এমন কোনো তহবিল না থাকায় এ অর্থ সমন্বয় করারও সুযোগ নেই। আগে বস্তা ও ওজনে কম দিয়ে এ অর্থ সমন্বয় করা হতো। কিন্তু এখন আর সেই সুযোগ নেই। বাকি অর্থ তাঁদের পকেট থেকে গুনতে হয়।

পরিবহনে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় তার একটি হিসাব দেন বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান মাহাতাব হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলে ৩৫০ জন। এর মধ্যে জাটকা শিকার নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সহায়তা পেয়েছেন ৯৬ জন। এই ৯৬ জনের ৪০ কেজি করে ৩ টন ৮৪০ কেজি চাল গুদাম থেকে বরাদ্দ পেয়েছি। এ জন্য গুদাম থেকে প্রতি টনে লোডিং চার্জ দিতে হয় ৬০০ টাকা করে ২ হাজার ৪০০ টাকা। এরপর বকশিশ তো আছেই। পরে চাল ইউনিয়ন পরিষদে নিতে ট্রাক ভাড়া দিতে হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। এরপর বিতরণের জন্য অন্তত চারজন শ্রমিকের মজুরি অন্তত দুই হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। কিন্তু পরিবহন ব্যয় বাবদ পাব এক হাজার টাকা। বাকি অর্থ আমাদের পকেট থেকেই গুনতে হবে।’

■ প্রতি টনে ২৫০ টাকা দিলেও স্থানভেদে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়।

■ ইউনিয়ন পরিষদে এ ধরনের কোনো তহবিল না থাকায় অর্থ সমন্বয় করারও সুযোগ নেই।

বরগুনা সদরের নলটোনা ইউপির চেয়ারম্যান মো. সফিকুজ্জামান বলেন, তাঁর ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলে ১ হাজার ৯৫৭ জন। জাটকা শিকার নিষেধাজ্ঞায় সহায়তা দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৬৯৯ জনকে। এ জন্য ১৩৬ টন চাল গুদাম থেকে ইউনিয়ন পরিষদে আনতে তাঁর ব্যয় পরিবহন ও আপলোড-আনলোড শ্রমিক মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা। তিনি পরিবহন বাবদ সরকারি বরাদ্দ পাবেন ২০ হাজার টাকা। বাকি টাকা পকেট থেকে গুনতে হবে।

জেলেদের সহায়তা বিতরণে এই চিত্র সারা দেশের। জনপ্রতিনিধি, জেলে ও সচেতন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হয় এ নিয়ে। তাঁরা সবাই বলেছেন, সরকারি সহায়তার চাল বিতরণে অনিয়ম, ওজনে কম দেওয়া, তালিকা প্রণয়নে যেসব দুর্নীতির খবর পাওয়া যায়, এর মূলে রয়েছে এসব চাল পরিবহনে পরিবহন ব্যয় বরাদ্দ না থাকা।

বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, গরিব জেলেদের যে সহায়তা দেওয়া হয়, তা অপ্রতুল। তার ওপরে এসব চাল পরিবহনে নামমাত্র বরাদ্দ এ সহায়তা বিতরণে দুর্নীতিকে ত্বরান্বিত করছে। এটা রোধ করতে হলে অবশ্যই পরিবহন ব্যয় বাড়াতে হবে।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি শাহ সাজেদা এ প্রসঙ্গে বলেন, জেলেদের এ সহায়তা বিতরণে দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ করতে হলে প্রথমে এসব চাল পরিবহন-বিতরণে যে ব্যয় হয়, তা সঠিকভাবে জনপ্রতিনিধিদের দিতে হবে। এটা নিশ্চিত না করায় চাল বিতরণে দুর্নীতিকে ত্বরান্বিত করছে। সুবিধাভোগী তালিকা প্রণয়ন ও বিতরণ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে হলে কঠোর নজরদারি আরোপ করার মতো নৈতিক ভিত্তি তৈরি করতে হবে।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার বলেন, আগে এ সহায়তা বিতরণে কোনো ধরনের পরিবহন ব্যয় নির্বাহের বরাদ্দ ছিল না। বাস্তবতা অনুধাবন করে সরকারের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেই দুই বছর আগে থেকে কিছু অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।