সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি, পিটুনিতে এসআইসহ দুজন আহত

ডাকাতি
প্রতীকী ছবি

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার একটি আঞ্চলিক সড়কে চার ব্যক্তি ডাকাতির শিকার হয়েছেন। এ সময় দুজনকে হাত–পা বেঁধে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই)। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার বদরগঞ্জ-লালদিঘী সড়কের কদমতলী নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তাঁদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।

আহত এসআইয়ের নাম মেহেদী হাসান (৩৫)। তিনি রংপুর পুলিশ লাইনসে কর্মরত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি বদরগঞ্জ থানার এসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর স্ত্রী বর্তমানে বদরগঞ্জ থানার এসআই। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় ঘটনার বিষয়ে মেহেদী হাসানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বদরগঞ্জ থানা–পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এসআই মেহেদী হাসান সাধারণ পোশাকে রাতে ওই সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেলে একাই বদরগঞ্জে আসছিলেন। এ সময় ডাকাতেরা গাছ কেটে সড়কে ফেলে তাঁকে আটক করে। পরে টেনেহিঁচড়ে সড়কের অদূরে নিয়ে তাঁর সঙ্গে থাকা মুঠোফোনসহ টাকা লুটে নেয় ডাকাতেরা। এ সময় হাত-পা বেঁধে মাটিতে ফেলে লাঠি দিয়ে তাঁকে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে তাঁর মাথা ও কপাল ফেটে রক্তক্ষরণ হয়েছে।

রাতে ওই সড়কে অটোরিকশায় করে দায়িত্ব পালন করছিলেন বদরগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) খাদেমুল ইসলাম। রাতে ঘন কুয়াশার কারণে ঠিকমতো চারপাশ দেখা যাচ্ছিল না বলে জানান তিনি।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে খালেমুল বলেন, সড়কের ওই স্থানে রাত একটার দিকে তিনি দেখতে পান একটি গাছ কেটে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। পাশে পড়ে ছিল তিনটি মোটরসাইকেল। ঘটনা আঁচ করতে পেরে তিনি বাঁশিতে ফুঁ দেওয়া শুরু করেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাত দল তাৎক্ষণিক পালিয়ে যায়। খানিকটা দূর থেকে ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ আর্তনাদ শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখতে পান, এসআই মেহেদী হাসানের হাত-পা প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে বাঁধা। ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না। তাঁর কপাল ও মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছিল।

খানিক দূরে একইভাবে আরও তিনজনকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করেন খাদেমুল। তাঁরাও পথচারী। এর মধ্যে শরিফুল ইসলাম (৩১) নামের এক পথচারীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো ও বেধড়ক পেটানোর কারণে শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। পরে এসআই মেহেদী হাসান ও পথচারী শরিফুল ইসলামকে সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

শরিফুলের বাড়ি রংপুর সদরের তিনঘরিয়াপাড়া গ্রামে। তিনি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বলে থানা–পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ডাকাতের কবলে পড়া অপর দুজন হচ্ছেন বদরগঞ্জ পৌরসভার থানাপাড়া গ্রামের অরূপ রায় (২৫) ও বালুয়াভাটা গ্রামের মিজানুর রহমান (৩২)। ডাকাতেরা তাঁদের কাছ থেকেও টাকা ও মুঠোফোন লুটে নিয়েছে।

ডাকাতের কবলে পড়া অরূপ রায় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি তাঁর বন্ধু মিজানুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে একটি মোটরসাইকেলে করে ওই সড়ক দিয়ে বদরগঞ্জে ফিরছিলেন। এ সময় রাস্তায় গাছ কেটে ডাকাতেরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। গাছের কাছে আসামাত্রই ডাকাতেরা মোটরসাইকেলটি আয়ত্তে নিয়ে তাঁদের ভয় দেখিয়ে সড়ক থেকে নিচে নামিয়ে নিয়ে যায়। এরপর কাছে থাকা ১১ শ টাকা ও একটি মুঠোফোন কেড়ে নেয়। পরে হাত-পা বেঁধে বেগুনখেতে ফেলে রাখে। এর কিছু পরেই একটি মোটরসাইকেল এলে ডাকাতেরা সেটিও আটক করে।

অরূপ রায় আরও বলেন, ‘দূর থেকে শুধু শুনতে পেরেছি, একজন ডাকাতদের তখন বলছিল, “আমি এসআই মেহেদী”। এর পরই ব্যাপক মারধর করার শব্দ শুনতে পাই। ভয়ে তখন জড়োসড়ো হয়ে ছিলাম।’

বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা উপ–সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন আজ শুক্রবার ভোরে এই প্রতিবেদককে জানান, বেধড়ক পেটানোর কারণে এসআই মেহেদী হাসানের কপাল ও মাথা ফেটে রক্তক্ষরণ হওয়ায় আটটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। তাঁর মাথা, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত ফোলা জখম রয়েছে। একইভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো ও পেটানোর কারণে মাথায় ও পায়ে একাধিক সেলাই দেওয়া হয়েছে পথচারী শরিফুল ইসলামকেও। দুজনেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে তাঁরা এখনো আশঙ্কামুক্ত নন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ মিয়া আজ ভোরে প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সড়কে এমন অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেনি। হঠাৎ গত রাতে তা ঘটেছে। অপরাধীদের শনাক্তসহ ধরতে পুলিশি অভিযান চলছে। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি মোটরসাইকেল পুলিশ উদ্ধার করেছে। এর একটি হচ্ছে এসআই মেহেদী হাসানের মোটরসাইকেল। উদ্ধার মোটরসাইকেলগুলো পথচারীদের। সড়কে দায়িত্বে থাকা পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ায় দুষ্কৃতকারীরা মোটরসাইকেলগুলো নিয়ে যেতে পারেনি।