কেন্দুয়ায় বিএনপির নেতাদের বাসা-দোকানপাটে ভাঙচুর-লুটপাট

বিএনপির নেতাদের বাড়িঘরে ভাঙচুর। বুধবার রাতে কেন্দুয়ায় জেলা বিএনপির সদস্যসচিবের বাসায়
ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির ডাকা তৃতীয় দফা অবরোধের সমর্থনে নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় কয়েকটি স্থানে মশাল নিয়ে ঝটিকা মিছিল করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলার চিরাংবাজার, গোগবাজার, সান্দিকোনা ও পৌর শহরের সাউদপাড়া এলাকায় মশালমিছিল করা হয়।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের মিছিলের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে পৌর শহরে ‘শান্তি’ মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির নেতাদের কয়েকটি বাসা ও দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, রাত আটটার দিকে কেন্দুয়া থানা থেকে প্রায় ১৫০ গজ দূরে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম হিলালীর বাসা ভাঙচুর চালিয়ে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ পানির লাইন কেটে দেওয়া হয়। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হলে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা চলে যান। কিছুক্ষণ পর আবার সংঘবদ্ধ হয়ে তাঁরা ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে রফিকুলের ব্যক্তিগত কার্যালয়, রান্নাঘর, বাড়ির কাচ ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। এরপর থানা-সংলগ্ন পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরে আলমের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট করাসহ নগদ পাঁচ লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়ে যায় বলে দাবি তাঁর। এরপর পৌর শহরের সাজিউড়া মোড় এলাকায় উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির খন্দকারের দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

যুবদলের নেতা নাসির খন্দকার বলেন, তাঁর দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় দোকানে থাকা একটি মোটরসাইকেল, সোফাসহ কিছু জিনিসপত্রে দোকানের সামনে এনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একই সময় পৌর শহরের খাদ্যগুদাম এলাকায় বিএনপির নেতা দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়ার ব্যক্তিগত কার্যালয় ও তাঁর ভাতিজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া কেন্দুয়া খেলার মাঠ-সংলগ্ন পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যুবদলের নেতা আল আমিনের ওষুধের দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয় বলে জানা গেছে।

রাত সোয়া ১০টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় বিএনপির নেতা রফিকুল ইসলাম হিলালী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাসায় শুধু বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে অবস্থান করছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে আমার বাসায় হামলা করেছে। এ ছাড়া বিএনপির নেতা দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়, যুবদল নেতা নাসির খন্দকার, নূরে আলম, আল আমিনসহ বেশ কয়েকজনের দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে। এখনো তারা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে। কাপুরুষোচিত এসব ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর ভাষা নেই।’

জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুল হক ভূঁঞা প্রথম আলোকে বলেন, অবরোধের সমর্থনে মশালমিছিলের নামে বিএনপি নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে শান্তি মিছিল বের করেন। বিএনপির নেতা রফিকুল ইসলাম হিলালীর বাসা ও কয়েকজন নেতা-কর্মীর দোকানপাটে ভাঙচুরের বিষয়টি তাঁর জানা নেই বলে তিনি দাবি করেন।

কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, ‘এমন কোনো কিছু হয়নি। আমি সাজিউড়া মোড়ে আছি। খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।’ তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কিছু বিক্ষুব্ধ লোক বিএনপির নেতা-কর্মীদের দোকানপাটে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল। পুলিশ তাঁদের থামিয়ে দিয়েছে।