আজও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়, ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি

চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বইছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। স্বস্তি পেতে এক কৃষক চোখেমুখে পানির ছিটা দিচ্ছেন। সদর উপজেলার বোয়ালমারী এলাকায়ছবি: শাহ আলম

চুয়াডাঙ্গাবাসীর জন্য চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া যেন নিত্যসঙ্গী হতে চলেছে। টানা কয়েক দিন ধরে জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জের প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার আজ শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই সময়ে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৫৮ শতাংশ। এ নিয়ে চলতি মাসেই ১১ দিন দক্ষিণ-পশ্চিমের এই জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হলো।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আজও সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ডটি চুয়াডাঙ্গার। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে এপ্রিল মাসে এ পর্যন্ত ১১ দিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এপ্রিলের বাকি দিনগুলোতে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হওয়ার আশঙ্কা আছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অতি তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। শনিবার দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে। রবি ও সোমবার বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে এবং সারা দেশের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি ভাব বিরাজমান থাকতে পারে।

আজ দিনভর জেলা শহর ও আশপাশের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে জনগণের চরম অস্বস্তি ভাব চোখে পড়েছে। সদর উপজেলার খেজুরতলা গ্রামে বেলা দেড়টার দিকে তপ্ত দুপুরে মাথায় গামছা বেঁধে নেপিয়ার ঘাস কাটছিলেন ৬৫ বছর বয়সী কৃষক চান মিয়া। গরমে মাঠে কাজ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাড়িতি দুটো গরু আচে। গরুর জন্নি ঘাস কাটতি আসা। রোদির মদ্দি কাজ করতি সমেস্যা তো এট্টু হচ্চেই। কাজ না কল্লি তো আর হচ্চে না। ঘাস কাটার পর এট্টু জিড়িটিড়ি নিয়ে এই ভুঁইডা কুপাবো। ’

টেংরামারী গ্রামে চায়ের দোকানে বসে কথা হয় কৃষক আশকার আলীর (৭৪) সঙ্গে। চলমান তাপপ্রবাহ ও গরম নিয়ে বলেন, তাঁর জীবনকালে এমন গরম তিনি কখনো দেখেননি। আশকার আলী বলেন, ‘গরমের কারণ মনে হচ্ছে গজপ। আমরা আগে দেকিচি এইরাম রোইদ পড়েচে, কিন্তু এইরাম তাপ নাই। সেই সুমায় খালে-বিলি পানি থাইকতো। অ্যাকন কুথাও পানি নেই, রোদির ঝলক পড়চে। আমাদের বয়সে বহু কিচুই দেকিচি, অ্যারাম গরম দেকিনি।’

শহরের ব্যস্ততম শহীদ হাসান চত্বরে বেলা আড়াইটার সময় প্রায় ফাঁকা ছিল। সেখানে পুলিশ বক্সের পাশে রিকশার সিটে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন  ৭৭ বছর বয়সী রিকশাচালক একরাল হোসেন। দামুড়হুদার উজিরপুরের বাসিন্দা একরাল জানান, ১৯৭০ সাল থেকে তিনি রিকশা চালাচ্ছেন। চার ছেলে সবার আলাদা সংসার। দুই মেয়ে স্বামীর বাড়িতে। ছয় মাস আগে স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি একা। নিজের দুমুঠো খাবারের জন্য বৃদ্ধ বয়সেও রিকশা চালাচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বইছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। গরমে আলমডাঙ্গার গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচখাল পানিশূন্য। শুক্রবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

একরাল হোসেন বলেন, ‘আগের তাপ-গরমের সাতে অ্যাকনকার আকাশপাতাল তপাত। ঋতুর রদবদল হয়ে গিয়েচে। এই রোদি আর গরমে পারা যাচ্চে না। বয়স হয়ে গিয়েচে, অল্প পরিশ্রমেই কাহিল হয়ে যাচ্চি। তাই এট্টু রেস্ট নিচ্চি।’

এদিকে চলমান তাপপ্রবাহে তরমুজ ও ডাবের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। সরেজমিনে ঘুরে শহর, পাড়া-মহল্লায় আখের রস, লেবুপানিসহ নানা শরবতের দোকান বেড়েই চলেছে। আবদুল মান্নান নামের এক ক্রেতা বলেন, ১৫ দিন আগে ১৫০ টাকায় এক জোড়া ডাব পাওয়া যেত। এখন ভালো মানের একটি ডাবের দাম চাইছে ১৫০ টাকা। এ ছাড়া তরমুজের দামও দ্বিগুণ হয়েছে।

সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আউলিয়ার রহমান এসব রস, শরবত ও লেবুপানি কতটা স্বাস্থ্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, তাপপ্রবাহের কারণে খাওয়া-পরা ও চলাচল সবকিছুতেই নিয়ম মানতে হবে। ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া যাবে না। ঢিলেঢালা হালকা রঙের পোশাক পরতে হবে। একইভাবে যেখানে-সেখানে বিক্রি হওয়া আখের রস, শরবত, লেবুপানি খাওয়া যাবে না। কারণ, একই গ্লাসে একাধিক ব্যক্তি শরবত পান করছেন। এতে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসসহ সংক্রামক রোগব্যাধি ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।