ঘরবাড়ি হারানো ১০২টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে অন্যের বাড়িতে

আগুনে পুড়ে গেছে শ্রমিকদের ঘরের বিভিন্ন আসবাব। গতকাল শুক্রবার দুপুরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায়ছবি: মাসুদ রানা

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় শ্রমিক কলোনিতে অগ্নিকাণ্ডে ১০৮টি ঘর পুড়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া কলোনির শ্রমজীবী পরিবারের সদস্যরা সবকিছু হারিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘটনার পর তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আজ শনিবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত ১০২টি পরিবারে চাল ও কম্বল দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

এর আগে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের সময় অগ্নিকাণ্ডে তেলিরচালা এলাকার ছয়টি কলোনির ১০৮টি ঘর পুড়ে যায়। ওই সব কক্ষ ভাড়া নিয়ে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বসবাস করতেন। আগুনে তাঁদের কষ্টার্জিত টাকায় কেনা আসবাব, টিভি, ফ্রিজ, পরনের জামাকাপড়সহ মূল্যবান মালামাল পুড়ে যায়। এমনকি ঘরে থাকা চাল, ডালসহ খাদ্যসামগ্রী পুড়ে গেছে।

এলাকাবাসী ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কলোনির ১০৮টি কক্ষে ১০২টি পরিবার বসবাস করত। আগুনে ঘর পুড়ে যাওয়ায় তাঁদের কারও থাকার জায়গাটুকুও ছিল না। পরে তাঁরা একই এলাকায় প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানেই ভাসমান অবস্থায় তাঁদের সময় কাটছে। অনেককে এ অবস্থার মধ্যে আজ কারখানায় কাজে যেতে হয়েছে।

তেলিরচালা এলাকার লগোস অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার সুইং অপারেটর সুমনা আক্তার সপরিবার কলোনির একটি কক্ষে বসবাস করতেন। সুমনা বলেন, ‘বাড়িতে যখন আগুন লাগে, তখন আমরা দুজনই কারখানায় ছিলাম। দুপুরে খেতে বাড়িতে এসে দেখি দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। ঘর থেকে কোনো কিছু বের করতে পারিনি। ঘরে কিছু টাকা ছিল, সেগুলোও পুড়ে গেছে।’

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পোড়া কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, জাকারিয়া নামের এক ব্যক্তি পুড়ে যাওয়া ঘরে কিছু একটা খুঁজছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘরে আমার স্ত্রীর গয়না ছিল। আগুন লাগার সময় ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। এখন ছাইয়ের মধ্যে গয়না খুঁজতেছি।’

এদিকে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ১০২টি পরিবারে চাল ও কম্বল দিয়েছেন গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর-সিটি একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। দুপুরে পুড়ে যাওয়া কলোনি পরিদর্শন শেষে তিনি প্রতিটি পরিবারে ৩০ কেজি চাল ও একটি করে কম্বল দেন।

আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মানুষ এত সরু রাস্তা রাখেন কীভাবে? ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে পারে না। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা করা হয়েছে। তাঁদের চাল ও কম্বল দেওয়া হবে। যাঁরা রাস্তাঘাট রাখবেন না, বিদ্যুতের লাইন ঠিক রাখবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। মন্ত্রী বলেন, ‘শুধু রুম তুলে ভাড়া খাবেন, তা হবে না। আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তাঁদের ভাড়া খাইতে ভাল্লাগে। কিন্তু মানুষের জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না, তা হবে না।’

পুড়ে যাওয়া ঘরে স্ত্রীর হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণের চেইন খুঁজছেন এক ব্যক্তি। শনিবার দুপুরে কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মন্ত্রীর পরিদর্শনের সময় কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাউছার আহাম্মেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুরাদ কবীর, নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম আজাদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন শাহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় জমি ভাড়া নিয়ে মো. সুফিয়ান, সারোয়ার মিয়া, রায়হান মিয়া, নাজিম উদ্দিন, সফিক মিয়া ও মরহম আলী নামের কয়েকজন ছয়টি কলোনি নির্মাণ করেন। সেগুলো স্থানীয় কারখানার শ্রমিকদের কাছে ভাড়া দেন। প্রতিটি কক্ষে একটি করে পরিবার বসবাস করত। গতকাল দুপুরে মো. সারোয়ার মিয়ার কলোনির একটি কক্ষে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে রান্নার সময় আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছয়টি কলোনিতে ছড়িয়ে পড়ে।

অগ্নিকাণ্ডের সময় ভাড়াটেরা যে যতটুকু পেরেছেন মালামাল বের করার চেষ্টা করেছেন। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ও কোনাবাড়ী ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে বেলা আড়াইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে সুফিয়ানের ২৪টি, সারোয়ার মিয়ার ২২, রায়হান মিয়ার ২০, নাজিম উদ্দিনের ২০, সফিক মিয়ার ১২ ও মরহম আলীর ১০টি ঘর পুড়ে গেছে।