ঘটনার পর থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত ১৬টি মামলায় মোট ১৭৩ জনকে গ্রেপ্তার করছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর রাতভর অভিযান চালিয়ে আরও আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে জেলা শহরের আশপাশের এলাকাগুলোতে গ্রেপ্তার অভিযান চলায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে নিরাপরাধ কাউকে গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হবে না বলে পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
হামলা, সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত শনিবার রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে একটি এবং পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়। এরপর রোববার রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় র্যাব বাদী হয়ে একটি এবং পুলিশ বাদী হয়ে আরও দুটি মামলা করে। এরপর সোমবার রাতে জেলার বোদা থানায় আহমদিয়া সম্প্রদায় ও পুলিশ দুটি এবং পঞ্চগড় সদর থানায় আরও দুটি মামলা করে পুলিশ। এরপর মঙ্গলবার রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় আরও তিনটি মামলা করে পুলিশ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে ক্ষতিগ্রস্ত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে পঞ্চগড় সদর থানায় দুটি ও বোদা থানায় একটি মামলা করা হয়। এতে সদর থানার মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩টি এবং বোদা থানায় মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩টি। মোট ১৬টি মামলায় আসামি ১২ হাজারের বেশি বলে জানা গেছে।
পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা আজ সকালে বলেন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে জেলার পরিবেশ বর্তমানে স্বাভাবিক আছে। এখন পর্যন্ত মোট ১৬টি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে মোট ১৮১ জন। অপরাধীদের ধরতে পুলিশ ও যৌথবাহিনী কাজ করছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং যাচাই–বাছাইয়ের মাধ্যমে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ ঘটনায় কোনো নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হবে না।
এর আগে গত শনিবার রাতে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের তরুণ জাহিদ হাসানকে হত্যার অভিযোগে পঞ্চগড় পৌর শহরের দক্ষিণ রাজনগর এলাকার ঈসমাইল হোসেন (২৫) এবং তুলারডাঙ্গা এলাকার মো. রাসেলকে (২৮) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দুজনই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাহিদ হাসানকে পিটিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
পঞ্চগড় শহরের পাশে আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া জামাতের জলসা বন্ধের দাবিতে গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর পঞ্চগড় শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে মিছিল বের করা হয়। এতে পুলিশ বাধা দেয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একদল বিক্ষোভকারী আহম্মদনগর এলাকায় গিয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় দুই তরুণ নিহত ও পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক মানুষ আহত হন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়েন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আহমদিয়াদের জলসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।