বৈশাখী মঞ্চ বানাতে কাটা হলো দুই যুগের পুরোনো তিনটি গাছ

বৈশাখী মঞ্চ বানাতে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেটে ফেলা হয়েছে তিনটি গাছ। রোববার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈশাখী মঞ্চ তৈরির জন্য দুই যুগের পুরোনো তিনটি গাছ কাটা হয়েছে। রোববার সকাল থেকে গাছগুলো কাটা শুরু হয়। বিকেলের মধ্যে তিনটি গাছ কেটে সাবাড় করা হয়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিবেশবাদী সংগঠনের কর্মীরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, গাছ কেটে সাংস্কৃতিক চর্চা মেনে নেওয়া যায় না। গাছ না কেটে বিকল্প জায়গায় মঞ্চ তৈরি করা যেত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, তিনটি গাছের মধ্যে দুটি গাছ মরে গিয়েছিল। একটির ডালপালা মৃত। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে গাছগুলো কাটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা প্রাঙ্গণে বৈশাখী মঞ্চ তৈরির পরিকল্পনা করে প্রশাসন। সেই মোতাবেক অনুষদ ভবনের সামনের সড়ক দিয়ে বিজ্ঞান ভবনে যেতে ডান দিকে সারিবদ্ধভাবে লাগানো তিনটি কড়ইগাছের জায়গায় মঞ্চ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। নিজের টাকা দিয়ে ওই গাছগুলো ২০০০ সালের দিকে লাগিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুঈদ রহমান। রোববার সকাল থেকে তিন-চারজন শ্রমিক কুড়াল ও দা দিয়ে গাছ কাটা শুরু করেন। বিকেলের মধ্যে সব গাছ কাটা হয়ে যায়।

লেখক, গবেষক ও অধ্যাপক মুঈদ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেকোনো গাছ কাটা পড়লে খারাপ লাগে। গাছগুলো ২০০০ সালে আমার হাতেই লাগানো। বয়স ২৪ বছর হলো। গাছগুলোর মালিক এখন প্রশাসন। তবে গাছ কাটা দেখতে খারাপ লাগছে। কাটা খুব প্রয়োজন ছিল কি না, জানি না।’ তিনি বলেন, একটা মঞ্চ তৈরির জন্য গাছ কাটাকে তিনি ভালোভাবে দেখছেন না। মঞ্চ পাশে বা অন্য জায়গায় করা যেত। বিষয়টি পরিকল্পিত হলো না। ঠান্ডা মাথায় ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম ছুটিতে আছেন। উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুটি গাছ মৃত। আরেকটি গাছের ডাল মরে গেছে। অন্য ডালগুলো ভেঙে পড়তে পারে। তাই বিজ্ঞান বিভাগের ডিনসহ প্রকৌশল দপ্তরের প্রকৌশলীদের নিয়ে আলোচনা করে গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে মঞ্চ তৈরি করলে ভালো হয়। পাশে বা সামনে করলে জায়গা স্বল্পতা হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছ কাটার সমালোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন ‘অভয়ারণ্য’-এর সভাপতি ইশতিয়াক ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, গাছগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ ও সৌন্দর্যের প্রধান উপাদান। সেই গাছগুলো কাটা হচ্ছে। এটা আমরা কখনোই চাই না। নিজে দেখেছি সবগুলো গাছ জীবিত।’

রোববার বিকেলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আল মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গাছ কাটার ১০টি ছবি পোস্ট করেন। ক্যাপশনে লেখেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে এই গাছ কাটার অধিকার কে দিল? প্রতিটি গাছ কাটার হিসাব সাধারণ শিক্ষার্থীকে দিতে হবে। গাছগুলো না কেটে কি কোনো পরিকল্পনা করা যায় না? এই গাছ কাটার ষড়যন্ত্র যারা করেছে, তাদের প্রত্যেকের বিচার চাই।’

মঞ্চ তৈরির নামে পুরোনো গাছ নিধন চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও তরুণ কলাম লেখক ফোরামের দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যে মঞ্চ তৈরি করতে গাছ নিধন করতে হয়, এমন বৈশাখী মঞ্চ আমরা চাই না।’ নাম প্রকাশ না করে বাংলা বিভাগের এক অধ্যাপক বললেন, ‘ক্যাম্পাসে গাছ কাটা দেখে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। প্রশাসন কী যুক্তিতে তরতাজা গাছগুলো কাটল, কোনোভাবেই মানতে পারছি না। এই মঞ্চ বটতলা বা ওই গাছের আরেকটু সামনে করতে পারত।’