‘স্বামীর নির্যাতনে’ মৃত সন্তান প্রসব করলেন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী

পটুয়াখালী জেলার মানচিত্র

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় স্বামীর নির্যাতনে অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর গর্ভের পাঁচ মাসের সন্তান মারা গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসার পথে গতকাল শুক্রবার রাত আটটার দিকে মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি। আহত ওই নারীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত ওই নারীর নাম মোছা সাবিনা বেগম (২২)। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মো. ছালাম মোল্লার মেয়ে। তাঁর স্বামী পার্শ্ববর্তী বগা ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামের মো. মোজাফফর মোল্লার ছেলে মো. সুজন মোল্লা (২৬)। তিনি ঢাকায় দরজির কাজ করেন। ২০১৮ সালে তাঁদের বিয়ে হয়।

গতকাল রাত ১০টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, সাবিনা কাতরাচ্ছেন। পাশেই টেবিলের ওপর মৃত সন্তানটিকে ঢেকে রাখা হয়েছে।

সাবিনার মা আকলিমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা গরিব মানুষ। তাঁর স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। এরপরও মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে বিয়ের সময় ধারদেনা করে দুই লাখ টাকা যৌতুক দিয়েছেন। এখন আবার পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন সুজন, যা কোনোভাবেই দেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে সাবিনাকে প্রায়ই মারধর করেন তিনি। গতকাল দুপুরে সাবিনাকে টাকা এনে দিতে বললে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সুজন মারতে গেলে দৌড়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেন সাবিনা। পেছন থেকে লাথি মারলে সাবিনা মাটিতে পড়ে যান।

আকলিমা বেগম আরও বলেন, অসুস্থ সাবিনাকে তাঁর স্বজনেরা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্দেশে রওনা দেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাছাকাছি পৌঁছালে রাত আটটার দিকে সড়কের ওপর অটোরিকশার মধ্যেই পাঁচ মাসের মৃত ছেলেসন্তান প্রসব করেন সাবিনা।

পাঁচ মাসের মৃত সন্তান প্রসবের বিষয়টি গতকাল রাতে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘তাঁকে (সাবিনা) ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

স্ত্রীকে নির্যাতন করার অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন সুজন মোল্লা। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বৃহস্পতিবার ঢাকা এসেছি। শুক্রবার নির্যাতন করব কীভাবে? বাস্তবে অন্য ছেলের সঙ্গে সাবিনার প্রেম আছে, আমার সঙ্গে থাকতে চায় না। এ কারণে আমার সন্তান মেরে ফেলেছে।’

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আরিচুল হক বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’