বিএনপি বর্জন করলেও ভোট দিয়েছেন স্থানীয় নেতারা, কর্মীদের ক্ষোভ

সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনে নগরের মদনমোহন কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে সারিতে দাঁড়িয়েছেন ভোটারেরা। সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

বর্তমান সরকারের অধীনে সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের অংশ হিসেবে জেলা পরিষদ নির্বাচনেও কোনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। এমনকি দলীয় নেতা-কর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বা ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা আছে দলের।

এরপরও সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলটির একাধিক নেতাকে ভোট দিতে দেখা গেছে। এর মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও রয়েছেন। আজ সোমবার বেলা পৌনে একটার দিকে সিলেটের মদনমোহন কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন তিনি। ভোট দিয়েছেন বিএনপিপন্থী একাধিক ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ পদধারী নেতাও। এ নিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে।

কাউন্সিলরদের মধ্যে ভোট দিতে দেখা গেছে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান ওরফে কয়েস লোদী ও ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদ্য সাবেক আহ্বায়ক এ বি এম জিল্লুর রহমান ওরফে উজ্জ্বল এবং মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সৈয়দ তৌফিকুল হাদীকে। এর বাইরে বিএনপিপন্থী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, পৌরসভার কাউন্সিলর এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদের ভোট দিতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার। ফলে এটা সিলেকটেড ভোটারদের ভোট, পাবলিক ভোট নয়। তাই তিনি ভোট দিয়েছেন।

কাউন্সিলর রেজাউল হাসান বলেন, ‘আমার দল ইভিএমের (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) বিরুদ্ধে। যেহেতু একটা সুযোগ পেয়েছি, তাই ইভিএম দেখতে গিয়েছিলাম। কী প্রক্রিয়ায় কারচুপি হতে পারে, সেটা দেখার জন্যই গিয়েছি। এটা টাইম কিলিং মেশিন। এ প্রক্রিয়ায় ভোট দিতে কমপক্ষে ১০ মিনিট লাগে। এটা হয়রানি ও বিরক্তিকর।’

স্থানীয় বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিলেটে যেসব নেতা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্থানীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পেয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। তবে আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করে জয় পেয়েছিলেন। বিএনপি যেখানে নির্বাচন বর্জন করেছে, সেখানে তাঁর ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত ছিল। একইভাবে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরের দায়িত্বে থাকা বিএনপির পদধারী নেতাদের ভোট দেওয়া ঠিক হয়নি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদকের সঙ্গে বিএনপির তৃণমূলের পাঁচজন কর্মীর কথা হয়। তাঁরা প্রত্যেকেই বিএনপির পদধারী নেতাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে কেউই নাম প্রকাশ না করতে চাননি।

তাঁদের মধ্যে একজন কর্মী বলেন, ‘নির্দলীয় সরকার দাবিতে ও ইভিএমের বিরুদ্ধে আমরা সভা, সমাবেশ করছি। এসব সভা-সমাবেশে যেসব নেতা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে ইভিএমেই ভোট দিলেন। যাঁদের নেতৃত্বে আন্দোলন-সংগ্রাম করছি, তাঁদের এই দ্বৈত আচরণ তৃণমূলে বাজে একটা বার্তা ছড়াল।’

জেলা ও মহানগর বিএনপির একাধিক সূত্রের দাবি, সিলেট মহানগর ও জেলায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভোটার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অনেক পদধারী নেতাও জনপ্রতিনিধি হিসেবে আছেন।

সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী ওরফে পংকি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি যেখানে সব ধরনের নির্বাচন বর্জন করেছে, সেখানে দলীয় নেতাদের প্রার্থী হওয়া বা ভোট দেওয়া—কোনোটাকেই আমরা উৎসাহিত করি না। আমার দৃষ্টিতে, দলীয় ব্যক্তিদের এ নির্বাচনে ভোট দেওয়া উচিত হয়নি।’

আর জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, বিএনপি সব নির্বাচন বর্জন করে এক দফা আন্দোলন করছে। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে দলের। এখন কেউ কেউ যদি ভোট দিয়ে থাকে, সেটা বিচ্ছিন্ন বিষয়।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনে আজ ১৩টি ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য এবং ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে সদস্য পদে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট ৬৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১ হাজার ৪৬৩ জন। এর মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ১ হাজার ৪৩৯ জন। এতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নাসির উদ্দিন খান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন।