পাবনার বেড়া উপজেলায় শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে নাড়ু-মোয়া তৈরির প্রচলন দীর্ঘদিনের। প্রতিবছরই বাড়ির নারীরা অনেকটা উৎসবের আমেজে নানা প্রকারের নাড়ু-মোয়া তৈরি করে আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠদের বাড়িতে পাঠিয়ে থাকেন। পূজার সময় অতিথি আপ্যায়নের প্রধান উপকরণও নাড়ু–মোয়া।
তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় বেড়া উপজেলায় নাড়ু-মোয়া তৈরিতে এবার ভাটা পড়েছে। কারণ, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে তৈরির প্রতিটি উপকরণের দাম দেড় থেকে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এ কারণে বেশির ভাগ বাড়িতেই এবার গত বছরের তুলনায় পরিমাণে কম নাড়ু-মোয়া তৈরি হচ্ছে। কোনো কোনো বাড়িতে একেবারেই তৈরি হয়নি।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৫ থেকে ২০ রকমের নাড়ু-মোয়ার পদ তৈরির প্রচলন রয়েছে। তবে দুর্গাপূজার মধ্যে সবচেয়ে বেশি তৈরি হয় নারকেলের নাড়ু, তিলের নাড়ু, ক্ষীরের নাড়ু, ছাতুর নাড়ু, মুড়ির মোয়া, ঢ্যাপের মোয়া, ঝুড়ির মোয়া, বাদামের মটকা, তক্তি, পাকানো খৈ, মুড়কি প্রভৃতি।
নাড়ু–মোয়া তৈরির প্রধান উপকরণের মধ্যে রয়েছে আখের গুড়, নারকেল, তিল, যব, ধান, ডাল, তেল প্রভৃতি। প্রতিটি উপকরণের দাম মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেড় থেকে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গত বছরের ৯০ টাকা কেজি দরের গুড় এবার ১২০ টাকা, ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দামের (প্রতিটি) নারকেল এবার ১০০ টাকা, ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরের তিল এবার ১২০ টাকা, ১২০ টাকা কেজি দরের ঝুড়ি ভাজা এবার ২২০ টাকা, ৬০ টাকা কেজি দরের মুড়ি এবার ৮০ টাকা, খৈ তৈরির ৭০ টাকা কেজি দরের ধান ১২০ টাকা হয়েছে। এ অবস্থায় নিম্নমধ্যবিত্তরা গত বছরে এক হাজার টাকার মধ্যে যে পরিমাণ নাড়ু-মোয়া তৈরি করতে পেরেছেন, এবার সেই একই পরিমাণ তৈরি করতে প্রায় দুই হাজার টাকা লাগছে।
দুর্গাপূজা এলেই নাড়ু-মোয়া তৈরি করে বাড়তি আয় করেন বেড়া পৌর এলাকার গীতা রানী, ইন্দুবালা হালদারসহ বেশ কয়েকজন নারী। গীতা রানী ও ইন্দুবালা হালদার জানান, বিভিন্ন বাড়ি থেকে প্রতিবছরই নাড়ু-মোয়া বানানোর ডাক পান তাঁরা। এ ছাড়া বিভিন্ন বাড়ি থেকে উপকরণ নিয়ে এসে বাড়ি থেকেও এগুলো বানিয়ে দেন তাঁরা। কিন্তু এবার অল্প কয়েকটি বাড়ি থেকে এগুলো বানানোর ডাক পেয়েছেন। গত বছরেও নাড়ু-মোয়া বানিয়ে একেকজন প্রায় পাঁচ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছেন। কিন্তু এবার এক থেকে দেড় হাজার টাকাও আয় করতে পারছেন না।
দক্ষিণপাড়া মহল্লার স্কুলশিক্ষক দীপালি চক্রবর্তী বলেন, প্রতিটি উপকরণের দাম এবার বেশি। তাই গতবারের চেয়ে এবার মোটামুটি সবকিছু অর্ধেক পরিমাণ তৈরি করেছেন।
বেড়া উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুবল রায় বলেন, দুর্গাপূজায় বেড়ার ঘরে ঘরে নাড়ু-মোয়া তৈরির রীতি রয়েছে। ধনী-গরিব প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এসব তৈরি করে অতিথি আপ্যায়ন করা হয়। কিন্তু এগুলো বানানোর উপকরণের দাম বাড়ায় এবার এ ঐতিহ্যে কিছুটা ভাটা পড়েছে।