‘বয়সটা শ্যাষ হয়া আইল, ব্রিজটা হইল না’

শুকনা মৌসুমে লোকজন ঘাঘট নদের ওপরে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে অতি কষ্টে চলাচল করেন। বর্ষায় চলাচলের একমাত্র ভরসা ‘নৌকা’।

  • সেতু হলে বড়বিল মন্থনা হয়ে সরাসরি উপজেলা সদরে আসা-যাওয়া করা যাবে।

  • বর্তমানে বেতগাড়ি বাজার হয়ে ৩০ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরে যেতে হয়।

রংপুরের গঙ্গাচড়ার আলবিদিতর ইউনিয়নের ডাঙিপাইকান গ্রামের পাশে ঘাঘট নদের ওপরে লোকজন বাঁশের সাঁকো তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে এভাবে চলাচল করেন। গত সোমবার বিকেলে।
ছবি: প্রথম আলো

ডাঙিপাইকান, সয়রাবাড়ি, নগরবরাইবাড়ি ও কুটিরপাড়া—এই চার গ্রামে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ বসবাস করেন। প্রতিদিন চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে গ্রামগুলো থেকে অনেক মানুষ আসেন উপজেলা সদরে। এতে প্রতিবন্ধকতা হয়ে আছে ঘাঘট নদ।

শুকনা মৌসুমে গ্রামের লোকজন নিজেরা ওই ঘাঘট নদের ওপরে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে অতি কষ্টে পায়ে হেঁটে চলাচল করেন। বর্ষায় মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা ‘নৌকা’। তখন কষ্টের সীমা ছাড়িয়ে যায়। নিরাপত্তা, নির্বিঘ্নে চলাচল ও সময় অপচয়ের চিন্তা করে ওই নদ এড়িয়ে অনেকে অতিরিক্ত ১৫ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরে যাওয়া–আসা করছেন। স্বাধীনতার পর থেকে সেখানে সেতু নির্মাণের জন্য গ্রামগুলোর লোকজন দাবি জানিয়ে এলেও আজ অবধি তা পূরণ হয়নি।

ওই গ্রামগুলোর অবস্থান রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলবিদিতর ইউনিয়নে।

ওই চার গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডাঙিপাইকান গ্রামের পাশে ওই নদের ওপরে সেতু হলে উপজেলার বড়বিল মন্থনা হয়ে সরাসরি উপজেলা সদরে আসা-যাওয়া করা যাবে। এতে গ্রামগুলো থেকে উপজেলা সদরের দূরত্ব হবে ১০ কিলোমিটার। কিন্তু নদের কারণে সমস্যায় পড়ে তাঁদের বেতগাড়ি বাজার হয়ে ৩০ কিলোমিটার ঘুরে গঙ্গাচড়া উপজেলা সদরে যেতে হয়।

সম্প্রতি ওই চার গ্রামে গিয়ে জানা যায়, সেখানকার বেশিরভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা কৃষিনির্ভর। ঘাঘট নদে সেতু না থাকায় উৎপাদিত পণ্য তাঁরা সহজে উপজেলা সদরে এনে বিক্রি করতে পারেন না। কেউ অসুস্থ হলে নদ পারাপার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসতে বড় সমস্যায় পড়তে হয়। বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও ভুগছেন একই সমস্যায়।

সয়রাবাড়ি গ্রামের কৃষক সফিয়ার রহমান বলেন, ‘নদীটাত ব্রিজ (সেতু) না থাকায় আবাদের ধান–আলু উপজেলার বাজারোত বেচপার নিয়া যাওয়া খুব কষ্ট। ৩০ কিলোমিটার ঘুরিয়া যাবার নাগে। ভাড়া দেতে লাভ শ্যাষ।’

কুটিপাড়া গ্রামের কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থাকি শুনি আইসোচি নদীত ব্রিজ হইবে। কিন্তু বয়সটা শ্যাষ হয়া আইলো, ব্রিজটা হইলো না।’ ওই গ্রামের শিক্ষার্থী সুরভী আক্তার গঙ্গাচড়া ডিগ্রি কলেজে পড়াশোনা করেন। তিনি বলেন, ‘বর্ষাকালে ৩০ কিলোমিটার ঘুরে কলেজে যেতে সমস্যায় পড়তে হয়।’

উপজেলা প্রকৌশলী মজিদুল ইসলাম বলেন, ‘ডাঙিপাইকান গ্রামের পাশে ঘাঘট নদের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য সয়েল টেস্ট (মাটি পরীক্ষা) করে প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি। ওখানে ব্রিজ করার চেষ্টা চলছে।’