লক্ষ্মীপুরে কাউছার হত্যা, পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াতের নতুন অভিযোগ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতা কাউছার আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করে জেলা জামায়াত। আজ দুপুরে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবেছবি- প্রথম আলো।

লক্ষ্মীপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় জামায়াত নেতা কাউছার আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় এবার পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছে জামায়াতে ইসলামী। আজ মঙ্গলবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে জেলা জামায়াতের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জামায়াত নেতারা বলেন, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জামায়াত একটি স্বাভাবিক মৃত্যুকে নিয়ে রাজনীতি করছে। কাউছার আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাঁর ঘাড়ে ও মাথায় আঘাত ছিল। সেটি কীভাবে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জামায়াত নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, ‘বিএনপির নেতারা আমাদের বলেছিলেন, হত্যাকারী যে–ই হোক তাঁকে বহিষ্কার করা হবে। কিন্তু বিএনপি সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি। বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে, কাউছার এর আগে স্ট্রোক করেছেন, অতএব এটি স্বাভাবিক মৃত্যু। এসব কথায় সবাই বিভ্রান্ত হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির এআর হাফিজ উল্যাহ, সেক্রেটারি ফারুক হোসাইন নুরনবী, সহসেক্রেটারি মহসিন কবির, লক্ষ্মীপুর শহর জামায়াতের আমির আবুল ফারাহ ও চন্দ্রগঞ্জ থানা জামায়াতের সেক্রেটারি রেজাউল ইসলাম সুমন খান প্রমুখ।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারা যান জামায়াত নেতা কাউছার। তিনি বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের ওলামা বিভাগের সভাপতি ছিলেন।

এ ঘটনায় গত রোববার কাউছার আহমেদের স্ত্রী শিল্পী বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে লক্ষ্মীপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মো. রিয়াজ হোসেনকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আর ২০ জনকে আসামি করা হয়। এজাহারভুক্তরা বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৫ জুন বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজিবপুর এলাকায় বাদীর বাড়ির সামনে অভিযুক্ত মো. রিয়াজ হোসেনসহ আসামিরা দেশি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কাউসারের ভাই আফতাব হোসেনের ওপর হামলা করে। এ সময় তাঁকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করা হয়। ঘটনাটি দেখে কাউছার তাঁর ভাইকে বাঁচাতে যান। তখন তাঁর মাথার পেছনে লোহার রড দিয়ে কয়েকটি আঘাত করা হয়। এরপর মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁকে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালের সামনে তাঁদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এতে ভয়ে তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। পরে সন্ধ্যায় কাউছারের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগে গতকাল সোমবার শহরের গোডাউন রোড এলাকার বশির ভিলা হলরুমে বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘আমরা জামায়াতকে অনুরোধ জানিয়েছি ঘটনাটি যেন রাজনৈতিকভাবে না নেওয়া হয়। নিহত কাউছারের ভাই মো. আরজু ছিলেন যুবলীগের কর্মী। মাদকসহ নানা বিষয় নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এটি সম্পূর্ণ এলাকার ঘটনা, রাজনৈতিক কোনো ঘটনা নয়। জামায়াতের নেতারা আমাদের কথা দিয়েছেন ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। অথবা ১-২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করবেন। কিন্তু তাঁরা ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। তাঁরা কথা দিয়ে কথা রাখেননি।’

এদিকে, কাউছার আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। গত শুক্রবার রাতে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। লক্ষ্মীপুর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান, সদর (পূর্ব) উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মোখলেছুর রহমান ও যুগ্ম আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেনকে এই তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে।