যশোরে তথ্য পেতে আবেদনকারীকে ২০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ

যশোর জেলার মানচিত্র

তথ্য অধিকার আইনে কৃষি বিভাগের তথ্য চেয়ে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছিলেন উপজেলার শালবরাট গ্রামের বাসিন্দা শান্ত দেবনাথ। গত ২০ মার্চ ডাক বিভাগের মাধ্যমে তথ্য চেয়ে তিনি আবেদন করেন। আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সেই আবেদনের জবাব দেওয়া হয়।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তরুণ রায় স্বাক্ষরিত চিঠিতে তথ্য পাওয়ার জন্য শান্ত দেবনাথকে ২০ হাজার টাকা সরকারি চালানের মাধ্যমে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শান্ত দেবনাথ তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর ৮ ধারার উপধারা ১ ও ৩ অনুযায়ী কৃষি বিভাগের চার ধরনের তথ্য চেয়েছিলেন। ওই সব তথ্যের অনুলিপি পেতে এত টাকা জমা দেওয়ার কথা নয়।

তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর ৮ ধারার (৪) উপধারা (১)-এ বলা হয়েছে, ‘তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনুরোধকারীকে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ওই তথ্যের জন্য নির্ধারিত যুক্তিসংগত মূল্য পরিশোধ করতে হবে।’ বিধি-৮-এ বলা হয়, ‘লিখিত কোনো ডকুমেন্টের কপি সরবরাহের জন্য (ম্যাপ, নকশা, ছবি, কম্পিউটার প্রিন্টসহ) এ-৪ ও এ-৩ মাপের কাগজের ক্ষেত্রে প্রতি পৃষ্ঠা দুই টাকা হারে ও তদুর্ধ্ব সাইজের কাগজের ক্ষেত্রে তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ ফি বা তথ্যের মূল্য পরিশোধযোগ্য হবে।’

শান্ত দেবনাথকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আপনি ২০ মার্চ তথ্যপ্রাপ্তির জন্য অত্র দপ্তরে আবেদন করেন। সব তথ্য প্রস্তুতের জন্য সময় প্রয়োজন। তথ্য প্রস্তুত সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে তথ্য দেওয়া হবে। উক্ত তথ্যপ্রাপ্তির জন্য আপনি তথ্য অধিকার আইনের ৮(৪) ধারা মোতাবেক ২০ হাজার টাকা সরকারি চালানে জমাদানপূর্বক অত্র দপ্তর থেকে আবেদনকৃত তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।’

শান্ত দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিঠি পেয়ে অবাক হয়েছি। তথ্য না দেওয়ার জন্য এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমি এ বিষয়ে আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করব।’

বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্য অধিকার আইনে ‘ক’ ফরমে বিভিন্ন তথ্য চেয়ে ১৮ মার্চ আবেদন করেন শান্ত দেবনাথ। আবেদনে বাঘারপাড়া উপজেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছর খরিপ-১, খরিপ-২ ও রবি মৌসুমে কোন কোন প্রকল্পের আওতায় কী কী ফসলের প্রদর্শনী হয়েছে, তার তথ্য চাওয়া হয়। পাশাপাশি প্রকল্পের নাম, প্রদর্শনী হওয়া ফসলের নাম, ফসল অনুসারে প্রদর্শনীর জন্য বরাদ্দ বীজ, সার ও টাকার পরিমাণ (খাতওয়ারি), কৃষকপ্রতি প্রশিক্ষণ ভাতা ও নাশতার টাকার পরিমাণ, প্রদর্শনী পাওয়া কৃষকের নাম, ঠিকানা ও  মুঠোফোন নম্বর চাওয়া হয়। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছর ওই প্রকল্পগুলোর আওতায় কী কী ফসলের প্রদর্শনীর মাঠ দিবস পালিত হয়েছে, প্রতিটি মাঠ দিবসে বরাদ্দের পরিমাণ (খাতওয়ারি), মাঠ দিবসে অংশ নেওয়া কৃষকের নাম, ঠিকানা ও মুঠোফোন নম্বর এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছর কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় কোন মাঠে বোরো হাইব্রিড ধানের ‘সমলয়’ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, কত বিঘা জমিতে নেওয়া হয়েছে, সুনির্দিষ্টভাবে খাতওয়ারি বরাদ্দের পরিমাণ, সুফলভাগী কৃষকের নাম, ঠিকানা ও মুঠোফোন নম্বর চাওয়া হয়েছে।

বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তরুণ রায় বলেন, ‘উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এখন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। তথ্য পাওয়ার আবেদনটি সেই সময়ে করা। আমি কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছি। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী, আবেদনকারীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আমি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছি মাত্র। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমি কথা বলব।’