সুন্দরবনে নদী পার হচ্ছিল বাঘ, কাছে যেতেই গর্জন

সাঁতরে সুন্দরবনের নদী পার হচ্ছে একটি বাঘ
ছবিটি ভিডিও থেকে নেওয়া

সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের নদীতে নিয়মিত টহল দিচ্ছিলেন কয়েকজন বনকর্মী। তাঁদের বোট যাচ্ছিল সুন্দরবনে বন বিভাগের বানানো ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র আলী বান্দার সামনে দিয়ে। মধ্য দুপুরে টহল শেষে তাঁরা ফিরছিলেন বন অফিসে। হঠাৎ নদীর পানিতে কিছু একটা দেখে তাঁদের চোখ আটকে যায়। চোখ আটকানোরই কথা। আড়াআড়ি সাঁতরে নদী পার হচ্ছিল একটি বাঘ!

গতকাল রোববার দুপুরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা কার্যালয়ের টহলরত বনকর্মীরা এ ঘটনার সাক্ষী হন। সঙ্গে থাকা মুঠোফোনে ধারণ করেন সেই মুহূর্ত। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সেই ভিডিও শেয়ার করলে তা ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, বনকর্মীরা সাঁতরে যাওয়া প্রাণীটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিশ্চিত হওয়ার পর বলছেন, ‘বাঘ, বাঘ...। সরাসরি বাঘ দেখতেছি আমরা। বাঘ, বাঘ...। মামু, মামু, আসসালামু আলাইকুম।’ ততক্ষণে বনকর্মীদের টহল বোটটি বাঘের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে যায়। তখন বোটটি পেছনে সরিয়ে নিতে বলেন বনকর্মীদের কয়েকজন। এর মধ্যে বাঘটি ঘুরে তাকায় তাঁদের দিকে। গর্জন দিয়ে ওঠে বাঘটি। সবাই ভয় পেয়ে যান। পরে সাঁতরে নদীর অপর প্রান্তে বনের ভেতরে চলে যায় বাঘটি।

আরও পড়ুন

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শেখ মাহবুব হাসান টহলের সময়ে বনকর্মীরা যে বাঘ দেখেছেন, এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আলী বান্দা এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে এত কাছ থেকে বাঘ দেখতে পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম।

সুন্দরবনে প্রবেশে টানা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার পর বাঘের দেখা পাচ্ছেন পর্যটকেরাও। ১ সেপ্টেম্বর বনে প্রবেশের অনুমতি মেলার পর প্রথম ভ্রমণেই বাঘের দেখা পেয়েছেন দুটি ট্যুরিস্ট লঞ্চের পর্যটকেরা। গত শনিবার বনের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী এবং গতকাল সকালে কটকার খাল সাঁতরে পার হওয়া বাঘ দেখেন পর্যটকেরা।

পর্যটকবাহী বন সাম্পান লঞ্চে সুন্দরবন ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া ট্যুর অপারেটর শাহ জামান খান তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বাঘ সাঁতরে যাওয়ার দুটি ভিডিও শেয়ার করেন। তিনি লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। সুন্দরবনে প্রথম ট্যুরেই মামার দেখা পেলাম। প্রায় ১০ মিনিট ধরে এপাড় থেকে ওপাড় পাড়ি দিল আমাদের বন সাম্পানের খুব কাছ দিয়ে।’

আরও পড়ুন

পর্যটকবাহী নৌযান দ্য ক্রাউনের যাত্রী শিমুল বলেন, ‘শনিবার দুপুরের পরে কচিখালী থেকে সাঁতার কেটে বাঘকে নদী পার হতে দেখি আমরা। তখন জাহাজের সবাই হইহুল্লোড় করে ওঠেন। অনেকেই ভিডিও করার জন্য তাড়াহুড়ো করেন।’

এর আগে গত ৮ আগস্ট সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রের বন অফিসের সামনে দেখা মেলে একটি বাঘের। বিশাল বাঘটি বনরক্ষীদের ব্যারাকের খুব কাছে চলে আসে। এ সময় মুঠোফোনে বাঘটির ভিডিও ধারণ করেন এক বনরক্ষী। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সুপতি স্টেশনের চান্দেশ্বর ফরেস্ট কার্যালয়ে দেখা মেলে একসঙ্গে তিনটি বাঘের। দীর্ঘ সময় বাঘগুলো বন কার্যালয়ের কাছে অবস্থান করে।

বন বিভাগ বলছে, জুন থেকে আগস্ট—এই তিন মাস সুন্দরবনে বন্য প্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুম। তাই এই সময়ে কাউকে বনে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এর ফলে এ সময়ে বাঘসহ বন্য প্রাণীরা নিজেদের মতো স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করেছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন আজ সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সুন্দরবন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। নিষেধাজ্ঞায় বনে সব ধরনের প্রবেশ বন্ধ থাকায় এই জীববৈচিত্র্য আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। বনের মধ্যে অসংখ্য নদ-নদী, খালে বাঘ নিয়মিত পারাপার করে। তবে তা সাধারণভাবে চোখে পড়ে না। কারণ, বন্য প্রাণী নিস্তব্ধতা পছন্দ করে। কোলাহল, মানুষের উপস্থিতিতে এগুলো বনের গহিনে চলে যায়। দীর্ঘদিন মানুষের যাতায়াত না থাকায় বাঘের যে অবাধ বিচরণ হচ্ছিল, তাই বোঝা যায় পরপর বাঘ দেখতে পাওয়ার ঘটনা থেকে।