লোকবল নেই, সান্তাহার-লালমনিরহাট রুটের ১০টি রেলস্টেশন বন্ধ

বন্ধ রেলস্টেশন ভবনের চারপাশ আগাছায় ভরে গেছে। দোকান গড়ে উঠেছে স্টেশন চত্বরে।

অযত্ন–অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে গাইবান্ধার নলডাঙ্গা রেলস্টেশন। গত শুক্রবার তোলা
ছবি: প্রথম আলো

দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলরুটে ১০টি স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এসব স্টেশনে কোনো লোকবল নেই। নেই টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা। স্টেশনমাস্টারের কক্ষ, বিশ্রামাগারসহ সবকিছু কক্ষ তালাবদ্ধ রয়েছে। ফলে এসব স্টেশনে আপন গতিতে ট্রেন এসে দাঁড়ায়। যাত্রী নামার পর স্টেশন ছেড়েও যায় আপন গতিতে। রেল বিভাগ বলছে, লোকবলের অভাবে স্টেশনগুলো বন্ধ রয়েছে।

রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চলের অধীন সান্তাহার-লালমনিরহাট রেল রুটে ৩১টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ১০টি স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এগুলো হলো বগুড়ার পাঁচপীর মাজার ও সৈয়দ আহমদ কলেজ; গাইবান্ধার সালমারা, ত্রিমোহনী, কুপতলা, নলডাঙ্গা ও হাসানগঞ্জ এবং রংপুরের চৌধুরানী, অন্নদানগর ও মহেন্দ্রনগর। এর মধ্যে হাসানগঞ্জ সর্বোচ্চ় ১৫ বছর ধরে বন্ধ আছে।

সান্তাহার-লালমনিরহাট রুটে সাতটি ট্রেন চলাচল করে। অর্থাৎ বন্ধ থাকা স্টেশনের ওপর দিয়ে প্রতিদিন এসব ট্রেন ১৪ দফায় যাতায়াত করে। এর মধ্যে লালমনি এক্সপ্রেস লালমনিরহাট থেকে ঢাকা; রংপুর এক্সপ্রেস রংপুর থেকে ঢাকা; করতোয়া সান্তাহার থেকে লালমনিরহাটের বুড়িমারী; দোলনচাঁপা পঞ্চগড় থেকে সান্তাহার; পদ্মরাগ ও বগুড়া কমিউটার সান্তাহার থেকে লালমনিরহাট এবং কলেজ ট্রেন বোনারপাড়া থেকে সান্তাহারের মধ্যে চলাচল করে।

লালমনি ও রংপুর এক্সপ্রেস আগে থেকেই বন্ধ থাকা ছয়টি স্টেশনে থামত না। তবে স্থানীয় লোকজনের দাবির মুখে কিছুদিন ধরে নলডাঙ্গা স্টেশনে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন দাঁড়াচ্ছে। তবে ওই স্টেশনে টিকিট কাটার ব্যবস্থা নেই। বন্ধ স্টেশনগুলোয় সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত করতোয়া ও দোলনচাঁপা ট্রেন আর থামছে না। কেবল বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত পদ্মরাগ কমিউটার ও বগুড়া কমিউটার ট্রেন ওই ১০টি স্টেশনে থামছে।

গত শুক্রবার সকালে বন্ধ থাকা তিনটি স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, অবকাঠামো, রেলপথ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কোনো স্টেশনে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। কেবল ট্রেন চলাচলের জন্য একটি প্রধান লাইন খোলা রাখা হয়েছে। স্টেশনমাস্টারের কক্ষ, টিকিট কাউন্টার ও বিশ্রামাগার তালাবদ্ধ। ময়লা-আর্বজনা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। স্টেশন ভবনের চারপাশে আগাছায় ভরে গেছে। দোকান গড়ে উঠেছে স্টেশন চত্বরে।

আশপাশে গড়ে উঠেছে চা-পানের দোকান। প্ল্যাটফর্মে কেউ তাস খেলছেন, ছোট ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে। স্লিপার, লোহার নাট-বল্টু ও স্টেশনের খুচরা জিনিসপত্র চুরি গেছে।

নলডাঙ্গা স্টেশনে বসে আছেন কয়েকজন হকার। কিছু যাত্রী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান (৫৮) বলেন, ব্যবসায়িক কাজে প্রায়ই ট্রেনে করে গাইবান্ধা জেলা শহরে যেতে হয়। কিন্তু স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সব ট্রেন দাঁড়াচ্ছে না। যে ট্রেনগুলো দাঁড়াচ্ছে, সেগুলোতে টিকিট কাটার ব্যবস্থা নেই। ফলে অনেকে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করছেন।

একই এলাকার স্কুলশিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, পদ্মরাগ ও বগুড়া কমিউটার ট্রেনে উঠে টিকিট কাটার ব্যবস্থা আছে। অন্যগুলো টিকিট কাটার ব্যবস্থা না থাকায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দ্রুত স্টেশনগুলো চালু করা দরকার।

কুপতলা স্টেশনে একটিমাত্র রেলপথ। পাকা প্ল্যাটফর্ম নেই। কাঁচা প্ল্যাটফর্মে সারি সারি চা-পানের দোকান গড়ে উঠেছে। কুপতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, এসব এলাকার দরিদ্র মানুষ অল্প খরচে ট্রেনে বিভিন্ন জেলা শহরে যাতায়াত করতেন। স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

ত্রিমোহিনী স্টেশনও বেহাল। প্ল্যাটফর্মে ভ্রাম্যমাণ হকার ও চায়ের দোকান। একসময় এখান থেকে বালাসিঘাটে ট্রেন যেত। এটি ছিল জংশন স্টেশন। বর্তমানে সবকিছু অকেজো।

জানতে চাইলে গাইবান্ধা রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার আবুল কাশেম বলেন, গাইবান্ধা স্টেশনের দক্ষিণ পাশে ত্রিমোহিনী ও উত্তর পাশে কুপতলা। দুটি স্টেশনই লোকবলের অভাবে বন্ধ। গাইবান্ধা থেকে স্টেশন দুটির পার্শ্ববর্তী বাদিয়াখালী ও কামারপাড়া স্টেশনের মাধ্যমে ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। একইভাবে বন্ধ থাকা স্টেশনের পার্শ্ববর্তী চালু স্টেশনগুলো ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে।

রেলওয়ের রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চলের আওতাধীন লালমনিরহাটে রেলওয়ের বিভাগীয় কার্যালয়। এ কার্যালয় থেকে সান্তাহার-লালমনিরহাট রুটে চলাচলকারী ট্রেন নিয়ন্ত্রিত ও রুটটি দেখভাল করা হয়। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আবদুস সালাম মুঠোফোনে বলেন, লোকবলের অভাবে এসব স্টেশন বন্ধ রয়েছে। রেলওয়ের প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগপ্রক্রিয়া চলমান।