পাবনায় দাবদাহে মারা যাচ্ছে মুরগি, কমছে ডিমের উৎপাদন

গরমের তীব্রতা কমাতে মুরগির শরীরে পানি ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গতকাল রোববার পাবনা সদর উপজেলার জোতকলসা এলাকায়।ছবি: হাসান মাহমুদ

পাবনায় টানা পাঁচ দিন প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ চলছে। প্রচণ্ড গরমে পোলট্রি খামারে মুরগি মারা যাচ্ছে। এতে ডিমের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। খামারিরাও পড়েছেন বিপাকে।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার বেলা তিনটায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন শনিবার তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৭ এপ্রিল থেকে টানা ৫ দিন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে রয়েছে।

পোলট্রি খামারিরা বলছেন, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে মুরগি মারা যাচ্ছে। দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার মুরগির শরীরে পানি ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। গরমে মুরগি ছটফট করছে। স্ট্রোক করে মারা যাচ্ছে। গরমের কারণে মুরগিকে দুপুরে খাবার দেওয়া যাচ্ছে না। এতে ডিমের উৎপাদন কমে আসছে।

সদর উপজেলারর মালিগাছা ইউনিয়নের জোতগাছা গ্রামটি মুরগির খামারের জন্য সুপরিচিত। পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের মালিগাছা বাজার থেকে কিছুদূর এগিয়েই ডানদিকে গ্রামটির অবস্থান। আজ গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের সরু রাস্তা দুই পাশে অসংখ্য মুরগির খামার। এসব খামারে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগি রয়েছে। প্রতিটি খামারেই মুরগি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কর্মীরা। কেউ মুরগির শরীরে স্প্রে করে পানি দিচ্ছেন, কেউবা ডিম সংগ্রহ করছেন। অন্যদিকে খামারের ভেতর ঠান্ডা রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে বৈদ্যুতিক পাখা।

পাবনায় তালিকাভুক্ত লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে ৯৭৮টি; এই তালিকার বাইরে প্রায় ৫০০ খামার আছে। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির তালিকাভুক্ত খামার রয়েছে ১ হাজার ১৩০টি। এসব খামারে মুরগি রয়েছে প্রায় ৫৫ লাখ।

গ্রামের আলতাফ পোলট্রি খামারের শ্রমিক খবির উদ্দিন জানান, গরম শুরুর পর থেকেই খামারে মুরগির ছটফটানি শুরু হয়েছে। ফ্যানের বাতাসেও ঘর ঠান্ডা হচ্ছে না। প্রতিদিন ৫–৬ বার মুরগির শরীরে পানি ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপরও মুরগি মারা যাচ্ছে। তাঁদের খামারে দুই হাজার মুরগি রয়েছে। গত কয়েক দিনে ২৫–৩০টি মুরগি মরে গেছে। সর্বশেষ গতকাল ৮টি মুরগি মরেছে।

খামারের আরেক শ্রমিক সিমা খাতুন বলেন, ‘গরমে মানুষই টিকপ্যার পারতেছে না। মুরগি কেমনে টিকপি। পিরায় দিনই খামারথেন মরা মুরগি ফেলান লাগতেছে। মুরগির মরা দেইহে আমাগেরেই কষ্ট লাগতেছে। খামার মালিকির কী রহম লাগতেছে, বোঝেন তালি।’

খামার ঘরের টিনের চালে চটের বস্তা বিছিয়ে পানি ঢালা, মুরগির শরীরে পানি ছিটানো এবং মুরগিকে স্যালাইনসহ ভিটামিন সি–জাতীয় খাবার বেশি দিতে বলা হচ্ছে। অন্যদিকে দুপুরে অতিরিক্ত গরমের সময় খাবার না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
গৌরাংগ কুমার তালুকদার, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, পাবনা

আরেকটি খামারের মালিক আবদুল মান্নান জানান, গরম শুরুর পর থেকে মুরগিকে ওষুধ ও স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী খাবারও কম দেওয়া হচ্ছে। এতে ডিমের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
আলতাফ হোসেন নামের আরেক খামারি বলেন, ‘এই গরমে আমরা খামার নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। এমন গরম থাকলে খামারে মুরগি টেকানো কঠিন হয়ে যাবে। আমাদের পথে বসতে হবে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় তালিকাভুক্ত লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে ৯৭৮টি; এই তালিকার বাইরে প্রায় ৫০০ খামার আছে। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির তালিকাভুক্ত খামার রয়েছে ১ হাজার ১৩০টি। এসব খামারে মুরগি রয়েছে প্রায় ৫৫ লাখ।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গৌরাংগ কুমার তালুকদার জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে খামারে কিছু সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তবে খামার রক্ষায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণসহ খামারিদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। খামার ঘরের টিনের চালে চটের বস্তা বিছিয়ে পানি ঢালা, মুরগির শরীরে পানি ছিটানো এবং মুরগিকে স্যালাইনসহ ভিটামিন সি–জাতীয় খাবার বেশি দিতে বলা হচ্ছে। অন্যদিকে দুপুরে অতিরিক্ত গরমের সময় খাবার না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এ অবস্থায় ডিমের দামে প্রভাব পরবে কি না, জানতে চাইলে গৌরাংগ কুমার তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত ডিমের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। যেহেতু কিছু মুরগি মারা যাচ্ছে, অন্যদিকে মুরগিকে কম খাবার দেওয়া হচ্ছে। এতে ডিমের উৎপাদন কমতে পারে।