২৮ বছর পর আবার আলোচনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

দ্বাদশ নির্বাচন উপলক্ষে ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে সড়ক। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকায়ছবি- জুয়েল শীল

গত পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ভোটের মাঠে ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়ে তুলতে পারেননি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। জোট-মহাজোটের লড়াইয়ে বরাবরই পিছিয়ে ছিলেন তাঁরা। তবে এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে পরিস্থিতি ভিন্ন। চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে অন্তত ১০টি আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভোটযুদ্ধে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে লড়ে যাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের কারণে নৌকা প্রতীক পেলেও সহজ জয়ের পথে ‘চ্যালেঞ্জ’-এ পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ভোটে অংশ না নেওয়ায় এবার মূলত লড়াই হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের।

চট্টগ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়ের রেকর্ড ছিল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছিলেন বিএনপির সাবেক নেতা নুরুল আলম। তবে ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ অধিকাংশ দল ভোট বর্জন করেছিল। এরপরের নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থীরা ঘুরেফিরে জয়ী হয়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করতে দলের মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার সুযোগ দেয় আওয়ামী লীগ। এই সুযোগে দেশের অন্যান্য আসনের মতো চট্টগ্রামেও প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এবারের নির্বাচনে চট্টগ্রামের আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ১৫ জন। সাধারণ স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ৫ জন।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দেওয়া হোসাইন মো. আবু তৈয়ব, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বিজয় কুমার চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০-এ (হালিশহর, পাহাড়তলী, খুলশী, ডবলমুরিং) সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম ও নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, ইপিজেড ও পতেঙ্গা) আসনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে জাতীয় সংসদের হুইপ ও টানা তিনবারের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দেওয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মোতালেব এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান প্রচার-প্রচারণায় শুরু থেকে সরব আছেন। এসব নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নিয়মিত পাল্টাপাল্টি হামলা, অভিযোগ, বিষোদ্‌গার চলছে।  

স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে থাকা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের অনেকেই দুই থেকে তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন। টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে এই সংসদ সদস্যদের ঘিরে একশ্রেণির নেতা-কর্মী বলয় তৈরি করেছেন। এ কারণে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কোনো কোনো আসনে মনোনয়ন নিয়েও বিরোধ তৈরি হয়েছে। এসব কারণে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

লড়াইয়ে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, হোসাইন মো. আবু তৈয়ব, জিয়াউল হক ও আবদুচ ছালাম প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী। দলের নেতা-কর্মীদের বড় অংশ তাঁদের সঙ্গে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১৫টিতে জয়ী হন আওয়ামী লীগ ও এর শরিক দলের প্রার্থীরা এবং একটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিএনপিবিহীন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ও এর শরিক দলের ১৪ জন এবং জাতীয় পার্টির দুজন প্রার্থী জিতেছিলেন। তবে ২০০৮ সালের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের বাইরে প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছিলেন এলডিপির প্রেসিডেন্ট অলি আহমদ। বাকি ১৫টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের ১১ এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ৪ প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন।

পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (সপ্তম থেকে একাদশ) আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের মনোনীত প্রার্থীরা ঘুরেফিরে জয়লাভ করেন। এর মধ্যে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ভোট বর্জন করেছিল। ওই নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে সাতটিতে আওয়ামী লীগ ও একটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন। লড়াই হওয়া অন্য আটটি আসনের মধ্যে সাতটি আওয়ামী লীগ ও শরিক এবং একটি জাতীয় পার্টি জিতেছিল।