দুর্যোগে অশান্ত তেঁতুলিয়া, বাঁধ চান বাসিন্দারা

কৃষি সমৃদ্ধ ভেলুমিয়া ও ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চারপাশে জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণে কোনো বাঁধ নেই। নেই তীর সংরক্ষণের ব্যবস্থা।

ভোলার সদর উপজেলার ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট এলাকা তেঁতুলিয়া নদী ভাঙনের শিকার। গত শনিবারছবি: প্রথম আলো

ভোলার পশ্চিমে তেঁতুলিয়া নদী এমনিতে শান্ত। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে ‘শান্ত’ তেঁতুলিয়া ‘অশান্ত’ হয়ে ওঠে। তখন সবকিছু খড়কুটার মতো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তেঁতুলিয়া নদীর তীরে ভোলা সদর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ভেলুমিয়া ও ভেদুরিয়া ইউনিয়ন। কৃষিসমৃদ্ধ ইউনিয়ন দুটির চারপাশে জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণে কোনো বাঁধ নেই। নেই তীর সংরক্ষণের ব্যবস্থা।

উচ্চ জোয়ার, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় হলে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভেলুমিয়া-ভেদুরিয়ার বাসিন্দারা। এখানে গ্যাসক্ষেত্র, টেক্সটাইল কলেজসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে; কিন্তু চারপাশে কোনো বাঁধ না থাকায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বারবার ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালে এবার ইউনিয়ন দুটিতে শতকোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিনে দুই ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ ফসলের খেত, পুকুর, মাছের খামার এখনো পানিতে নিমজ্জিত। যত্রতত্র উপড়ে পড়েছে গাছ। অধিকাংশ কাঁচা ঘরের ভিটেমাটি ধসে গেছে। বিদ্যালয় ও বাড়ির উঠানে পানি। প্লাবিত মাছের পুকুরের পাশে জাল দিয়ে লোকজন মাছ ধরছেন। গাছের পাতা, ময়লা-আবর্জনায় পুকুর ও খালের পানির রং পাল্টাতে শুরু করেছে। চারদিকে দুর্গন্ধ ভাসছে। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ভাঙা ঘর সংস্কারের চেষ্টা করছেন।

ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভেদুরিয়ার ব্যাংকেরহাট বাজার থেকে টেক্সটাইল কলেজ হয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে যাওয়ার রাস্তাটি একমাত্র পাকা সড়ক। এবার ঝড়ের সময় রাস্তার ওপর দিয়ে চার থেকে পাঁচ হাত পানি গেছে। রাস্তাটি এমনভাবে ওলটপালট হয়েছে, এখন গাড়ি চালানো অসম্ভব। ওয়ার্ডের শত শত গবাদিপশু কিল্লায় নেওয়ার পরও ৭টি গরু, ১০টি মহিষের বাচ্চা ও কয়েক শ হাঁস-মুরগি মারা গেছে। অনেকের ঘরবাড়ি ধসে গেছে।

ভোলার ব্যস্ত লঞ্চঘাটের একটি ভেদুরিয়া। ওই ঘাট থেকে ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন নৌপথে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলার ছেড়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে লঞ্চঘাটের দুই পাশের সাতটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তেঁতুলিয়া নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঘাটের গ্যাংওয়ে ও সড়ক হুমকির মুখে। লঞ্চঘাট থেকে দক্ষিণে চটকিমারা খেয়াঘাট পর্যন্ত গড়ে ৩-৪ হাত নদী তীর ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেছে। লঞ্চঘাটের ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিরা ক্ষতিপূরণ নয়; সরকারের কাছে ভেলুমিয়া লঞ্চঘাটসহ তেঁতুলিয়া নদীর তীর সংরক্ষণের দাবি জানান।

ভেদুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ইউপি কার্যালয়ে ৩০টি সম্পূর্ণ ও দুই শতাধিক আংশিক ঘর সংস্কারের আবেদন পড়েছে। ভেদুরিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৫ হাজার পুকুর ভেসে গেছে। গাছ বিধ্বস্ত হয়েছে ১২ হাজার। অসংখ্য গবাদিপশু মারা গেছে। ভেলুমিয়া ইউনিয়নেও একই ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ভেদুরিয়া ইউপির চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হলেই ভেদুরিয়াবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হন। সমস্যা সমাধানে ভেদুরিয়া ও ভেলুমিয়ার চারপাশে বাঁধ করা দরকার।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাসান মাহমুদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালে ভোলার বাঁধগুলোকে টানা তিন দিনের উচ্চ জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলা করতে হয়েছে। এ জন্য বাঁধের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ফলে পাউবোকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।