সাগর উত্তাল থাকলেও কক্সবাজারে ঘরে ফিরছে মানুষ

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে কক্সবাজার সৈকতের সমুদ্র উত্তাল হয়ে পড়েছে। রোববার সকালের ছবিপ্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজারের উপকূল উত্তাল থাকলেও রোববার রাত ১০টার পর আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরারটেকসহ আশপাশের যেসব গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছিল—ভাটা শুরু হওয়ায় সেসব গ্রামের পানিও নেমে গেছে। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১০ হাজার মানুষ অবস্থান করছেন। সোমবার সকালে এসব মানুষও ঘরবাড়িতে ফিরে যাবেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজারের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি, সারা দিন থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইয়ে যেতে থাকে। বিকেল চারটার পর থেকে উপকূলের লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে বাড়িঘর ছাড়তে শুরু করেন। আশ্রিতদের জন্য জেলার ৯টি উপজেলাতে ৬৩৮টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়।

রোববার দিবাগত গভীর রাতে সরেজমিন এলাকা ঘুরে এসে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সাগরের জোয়ারের পানিতে শহরের নাজিরারটেক, কুতুবদিয়াপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে রাতে পানি সরে যাওয়াতে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। রাত ১২টা পর্যন্ত জেলার কোথাও প্রাণহানি কিংবা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ হাজারের মতো মানুষ অবস্থান করছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিংয়ে কক্সবাজার উপকূলকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সমুদ্রের পানির উচ্চতা সর্বোচ্চ ১২ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে এলাকা প্লাবিত হতে পারে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজার বিমান বন্দরে উড়োজাহাজের উঠানামা রোববার সারা দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়।

নাজিরারটেক উপকূলে শুঁটকি মাছ উৎপাদনের মহাল রয়েছে প্রায় ৭০০টি। জোয়ারের পানিতে বেশ কিছু মহাল প্লাবিত হয়েছিল। রাতের ভাটাতে জমে থাকা পানি পুনরায় সাগরে নেমে গেছে জানিয়ে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকবার কামাল বলেন, ওয়ার্ডের বাসিন্যাপাড়া, মোস্তাইক্যা পাড়া, বন্দরপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, খুদিয়ারটেক পাড়া, সমিতিপাড়ার শতাধিক ঘরবাড়ি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। পরে বিকেলে এসব পাড়ার লোকজন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেন। রাত ১০টার পর জোয়ারের পানি নামতে শুরু করলে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে লোকজন পুনরায় বাড়িতে ফিরে আসেন। তিনি জানান, তবে কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে গেছেন। রাত কাটিয়ে তাঁরা সকালে বাড়িতে ফিরবেন।

কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে কাজ করেন ৬০ হাজারের বেশি শ্রমজীবী মানুষ। এর ৮০ শতাংশ জলবায়ু উদ্বাস্তু। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও চকরিয়া উপজেলার এসব বাসিন্দা তাঁদের বসতভিটা হারিয়েছিলেন। পরে তাঁরা কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরারটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, ফদনারডেইলসহ ১৭টি গ্রামের সরকারি খাস জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন। তবে বেড়িবাঁধ না থাকায় ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত পড়লে এসব মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে এসব গ্রামে কয়েকশ ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছিল।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, রাত ১০টার পর সেখানকার পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজন বাড়িতে ফিরে গেছেন। তবে জোয়ারের কারণে সাগর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্বীপের উত্তর ও পশ্চিম পাশের কিছু দোকানপাট ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।