বাণিজ্য মেলা শুরু হচ্ছে রোববার, এবার বাড়ছে স্টল ও প্রবেশমূল্য

আগামীকাল মেলা উদ্বোধনের আগে  চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতির তোড়জোড়। এ বছর সব মিলিয়ে ৩৫০টি স্টল অংশ নেবে।

এ বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের আদলে তৈরি হয়েছে বাণিজ্য মেলার প্রধান ফটক। গতকাল বিকেলেছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কাঞ্চন সেতু থেকে উত্তরে কিছু দূর গেলেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র (বিবিসিএফইসি)। আগামীকাল রোববার থেকে এখানেই বসছে দেশে পণ্য প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় আয়োজন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) ২৮তম আসর। এবারের মেলায় ব্যবসায়ীদের স্টল ও দর্শনার্থীদের প্রবেশমূল্য দুটিই বাড়ছে।

বাণিজ্য মেলার স্থায়ী এই প্রাঙ্গণে তৃতীয়বারের মতো দেশ–বিদেশের ক্রেতা-ব্যবসায়ীরা মিলিত হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাসব্যাপী এ মেলা উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। উদ্বোধনের আগে মেলা প্রাঙ্গণে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতির তোড়জোড়।

গতকাল শুক্রবার প্রদর্শনী কেন্দ্রের কাছাকাছি যেতেই চোখে পড়ল আয়োজনের কর্মযজ্ঞ। মেলার ফটক তৈরি হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের (কর্ণফুলী টানেল) আদলে। শেষ সময়ে শ্রমিকেরা রং ও ঘষা–মাজার কাজ করছেন। ফটকে কর্মরত শ্রমিক রফিকুল ইসলাম জানান, ১০ দিন ধরে ফটক নির্মাণের কাজ করছেন তাঁরা। এখন রঙের কাজ চলছে। শুক্রবার রাতের মধ্যেই সব কাজ শেষ করার ভাবনা তাঁদের।

বিবিসিএফইসির ১৪ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার আয়তনের দুটি হল ছাড়াও এর সামনে–পেছনে দেখা গেল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টল নির্মাণের কাজ।

বাণিজ্য মেলার মূল প্যাভিলিয়নের ভেতর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির আদলে তৈরি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। গতকাল বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো যৌথভাবে মেলার আয়োজন করছে। সাধারণত ১ জানুয়ারি থেকে মেলা শুরু হলেও এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত সময়ের পর মেলা শুরু হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দেখা গেল প্রদর্শনীকেন্দ্র ধুয়েমুছে পরিষ্কার করতে। কোনো স্টল নির্মাণের পর পণ্যের পসরা সাজানো হচ্ছে। অনেক স্টলের নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। বিদেশি স্টলগুলোর নির্মাণকাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে।

মেলার নিরাপত্তায় র‌্যাব, পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ নজরদারির পাশাপাশি মেলা এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে।
বিবেক সরকার, সচিব, বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো

আয়োজক–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর দেশি–বিদেশি মিলিয়ে ৩৩১টি স্টল মেলায় অংশ নেয়। এ বছর সব মিলিয়ে ৩৫০টি স্টল অংশ নেবে। দেশীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, হংকং, ইরান, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা মেলায় নিজেদের পণ্য বিক্রি করবেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর মেলায় প্রবেশমূল্যও বেড়েছে। এ বছর সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য ৫০ টাকা ও ১২ বছরের কম বয়সীদের জন্য ২৫ টাকা টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে। গত বছর যা ছিল যথাক্রমে ৪০ ও ২০ টাকা।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। ছুটির দিন মেলা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য রাজধানীর ফার্মগেট ও কুড়িল বিশ্বরোড থেকে আলাদা বাস ছাড়বে। মেলায় আসতে ফার্মগেট থেকে ৭০ টাকা ও কুড়িল থেকে ৩৫ টাকা মূল্যের টিকিট কাটতে হবে দর্শনার্থীদের।

গতকাল এক্সিবিশন সেন্টারের পেছনে দেখা গেলো প্রাণ-আরএফএল–এর একটি বহুতল প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ করছেন শ্রমিকেরা। তিনতলা এই প্যাভিলিয়নের নির্মাণকাজ তদারক করছেন আরএফএল রিটেইল চেইনের বিপণন বিভাগের প্রধান শফিক শাহীন। প্রথম আলোকে তিনি জানান, প্যাভিলিয়ন তৈরিতে ৩৫ দিন ধরে ২০০ শ্রমিক রাতদিন কাজ করছেন। নির্মাণ শেষে এখন সাজসজ্জার কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের আগে কাজ শেষ করতে প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত শ্রম দিচ্ছেন শ্রমিকেরা।

এ বছর সব মিলিয়ে বাণিজ্য মেলায় ৩৫০টি স্টল থাকছে।গতকাল বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

মেলায় অংশ নেওয়া আইসক্রিম বিক্রির প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, গত দুই বছর কাঞ্চন সেতু থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের যানজট তাঁদের ভুগিয়েছে। সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলায় এবারও একই ধরনের সংকট তৈরি হবে বলে শঙ্কা তাঁর। সেই সঙ্গে আশপাশের এলাকার ধুলা ও ছিনতাইকারীদের নিয়ে ভাবনার কথা জানান তিনি।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সচিব বিবেক সরকার বলেন, সড়কের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় যানজট নিয়ে তাঁরাও ভেবেছেন। যানজট এড়াতে বিকল্প সড়কগুলো সচল রাখছেন। এ ছাড়া মেলার নিরাপত্তায় র‌্যাব, পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ নজরদারির পাশাপাশি মেলা এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে।

ইপিবি সূত্রে জানা যায়, গত বছর বাণিজ্য মেলায় ১০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়া মেলায় ৩০০ কোটি টাকার তাৎক্ষণিক রপ্তানি আদেশও পাওয়া যায়। মেলায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ দর্শনার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন বলে জানায় ইপিবি। এ বছর দর্শনার্থী ও লেনদেন দুটিই বাড়বে বলে প্রত্যাশা আয়োজকদের।