স্বামী ছাড়া অন্যরা জানতেন সন্তান তাঁর গর্ভের, এখন সবাই জেনে গেল

২০০২ সালে তাঁর বিয়ে হয়। স্বামী সৌদি আরবপ্রবাসী। সংসারে তিন মেয়ে। কোনো ছেলেসন্তান না হওয়ায় প্রবাসী স্বামীর সম্মতিতে শিশুটিকে দত্তক নিয়েছিলেন তিন লাখ টাকায়। স্বামী শুধু জানতেন দত্তক নেওয়ার বিষয়টি, শ্বশুরবাড়িসহ অন্যরা জানে ছেলেটি তাঁর গর্ভে জন্ম নেওয়া। কিন্তু দত্তক দেওয়া দম্পতির ঝগড়া থেকে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এখন বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেল।

এভাবে কষ্টের কথা জানান এক মা। দত্তক নিলেও ছেলেটিই তাঁর বুকের ধন। আজ সোমবার বিকেলে চট্টগ্রামে মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সূত্র জানায়, যমজ শিশু দুটির মা বাদী হয়ে মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামে গত ৩ মার্চ মামলা করেন। আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। এতে বলা হয়, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি নগরের একটি হাসপাতালে তাঁর দুটি যমজ শিশু ভূমিষ্ঠ হয়। কিন্তু তাঁর স্বামী ও হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক মিলে তাঁর শিশুদের বিক্রি করে দেন। পিবিআই মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে গত শনিবার দুই শিশুকে অক্সিজেন ও রাঙ্গুনিয়া থেকে উদ্ধার করে। আজ শিশু দুটিকে আদালতে হাজির করা হয়।

আদালত দুই শিশুকে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত তাদের দত্তক নেওয়া দুই নারীর কাছে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামের বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস এই আদেশ দেন। দুই শিশুকে ফিরে পেয়ে খুশি দত্তক নেওয়া দুই পরিবার।

কন্যাশিশুটি দত্তক নেওয়া আরেক নারী প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৭ সালে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁর ১৬ বছর বয়সী এক ছেলে আছে, সে প্রতিবন্ধী। এরপর একাধিকবার তাঁর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়েছে। তাঁর স্বামী দুবাই থাকেন। সর্বশেষ এক লাখ টাকায় মেয়েটিকে দত্তক নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে জানিয়েছেন, এ সন্তান তাঁর গর্ভের। মামলার কারণে তাঁর দত্তক নেওয়া সন্তানকে পিবিআই উদ্ধারের পর এই দুদিন দুর্বিষহ যন্ত্রণায় কেটেছে। এখন সন্তানকে ফিরে পেয়ে তাঁর মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহেদু্ল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাইব্যুনাল মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত দুই শিশুকে তাদের দত্তক নেওয়া দুই মায়ের কাছে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে মামলার বাদী ও দুই শিশুর মা আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, তাঁর দুই শিশুকে তিনি স্বেচ্ছায় দত্তক দিয়েছেন। দত্তক নেওয়া মায়েদের কাছে দুই শিশুকে রাখার বিষয়ে তাঁর আপত্তি নেই।

পিবিআই জানতে পারে, দত্তক দেওয়া শিশুদের মা যখন সন্তানসম্ভবা হন, তখন এক নারীর মাধ্যমে দুই সন্তানকে দত্তকের জন্য অপর দুজনকে ঠিক করেন। কথামতো সন্তান জন্মের পর ছেলেসন্তানকে তিন লাখ টাকায় এক নারীর কাছে দত্তক দেওয়া হয়। কন্যাসন্তানকে এক লাখ টাকায় দত্তক দেন আরেক নারীর কাছে। সন্তান বিক্রির টাকা থেকে বাদীর স্বামী পাঁচ হাজার টাকা চান কিছুদিন আগে। কিন্তু স্বামীকে টাকা দেননি বাদী। পরে স্বামী সন্তান বিক্রির টাকা থেকে স্ত্রীর অগোচরে দেড় লাখ টাকা নিয়ে নেন। বিষয়টি জানতে পেরে স্বামীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন স্ত্রী।