এমএম কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ফুল দিলেন তিনি

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন এম এম কলেজের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ মাহাবুবুল হক খান (বা থেকে তৃতীয়)ছবি: সংগৃহীত

যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এম এম) কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেয়েছেন মাহাবুবুল হক খান। ওই পদে যোগ দেওয়ার পর ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ নেতাদের ফুল দেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনা শুরু হয়েছে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তি হয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাদের কার্যালয়ে গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর ঘটনায় হতবাক হয়েছেন অনেকে। এটি সরকারি চাকরির নীতিবিরোধী বলে মন্তব্য করছেন বিশিষ্টজনেরা।

কলেজ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৩ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপনে যশোর সরকারি এম এম কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) অধ্যাপক মাহাবুবুল হক খানকে। মাউশির সরকারি কলেজ-২ শাখার উপসচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমিন এই প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন। মাহাবুবুল হক এর আগে যশোর সরকারি মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে অধ্যক্ষ পদে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন তিনি।

আরও পড়ুন
যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদারকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এম এম কলেজের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ মাহাবুবুল হক খান
ছবি: সংগৃহীত

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজে যোগদানের পর বিভিন্ন বিভাগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা নতুন অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এরপর সন্ধ্যায় কলেজ ছাত্রলীগের একাংশের নেতা–কর্মীদের নিয়ে তিনি শহরের কাজীপাড়া কাঁঠালতলা এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান। সেখানে দুই শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান তিনি। এরপর পর্যায়ক্রমে তিনি সদর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদারকেও ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা রাতে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। যা নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। নেতিবাচক মন্তব্যও করেন শিক্ষার্থী–শিক্ষকসহ অনেকে।

কলেজের একজন সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, সরকারি কর্মকর্তা হয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাদের ফুল দিয়ে তিনি রাজনৈতিক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ করেছেন। একটি রাজনৈতিক মত ও ব্যক্তিবিশেষের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছেন। এটি মোটেও সমীচীন হয়নি।

এম এম কলেজের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ মাহাবুবুল হক খান
ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয় জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মাহাবুবুল হক খান বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি–সম্পাদককে ফুল দিয়েছি এটা সত্য। রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে না, সভাপতি আমার আত্মীয়। সেই হিসেবে ফুল দিয়েছি।’ সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ও উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদারকেও আত্মীয় হিসেবে ফুল দিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রোববার অফিসে আসেন সামনাসামনি কথা বলব। তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে।’

যশোরের প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারি এম এম কলেজের অধ্যক্ষ একজন উপসচিবের ওপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তা। কলেজের অধ্যক্ষ হয়ে কোনো দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকা সরকারি চাকরির নীতিবিরোধী। ওই শিক্ষকের ব্যক্তিগত মতাদর্শ থাকতে পারে। তবে অধ্যক্ষ হয়ে তাঁর এমন কার্যক্রম জনগণের কাছে, শিক্ষক সমাজের কাছে শিক্ষার্থীদের কাছে বির্তকিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।