চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে সংলাপ প্রয়োজন: বদিউল আলম মজুমদার

কর্মশালায় বক্তৃতা করেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। আজ শুক্রবার দুপুরে বরিশাল নগরের সদর রোডে বিডিএস মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘দেশের রাজনীতিতে চলমান সংকট সমাধানে সংঘাতের বদলে সংলাপ প্রয়োজন। সংলাপের মাধ্যমে সমাধান আসুক। আমরা কেউই সংঘাত চাই না, চাই শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সহাবস্থান।’ আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় বরিশাল নগরের সদর রোডের বিডিএস মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার লক্ষ্যে বরিশাল বিভাগীয় কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন পেশার লোকজন এতে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বদিউল আলম মজুমদার। সঞ্চালনা করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলিপ কুমার সরকার। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নাগরিকেরাই হচ্ছেন রাষ্ট্রের মালিক। তাই নাগরিকদের কথা, নাগরিকদের মতামত সমুন্নত রাখা রাজনৈতিক দলগুলোর কর্তব্য।

সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, বাংলাদেশ জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, রক্ত দিয়েছিলেন। আপামর জনগণের রক্ত, জীবন, আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চায় নিজেদের মতো। দেশের অধিকাংশ মানুষ চান, রাজনৈতিক দলগুলো মধ্যে শর্তহীন সংলাপ হোক। দলীয় সরকার বনাম তত্ত্বাবধায়ক সরকার, এটা সংলাপের মধ্য দিয়ে ঠিক করা হোক।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও আলোচনা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এটা একটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন, গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সেই সংস্কৃতি দুঃখজনক হলেও অনুপস্থিত। এটাই শাসন ব্যবস্থার সংকটের মূল কারণ।

দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে বক্তারা বলেন, দেশের মানুষ শান্তি চান, সংঘাত নয়। সরকার দেশের জনগণের কল্যাণের জন্য, সে ক্ষেত্রে সরকার গঠনে জনগণের অংশগ্রহণকে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এটা দলগুলোর দায়িত্ব। এ জন্য এই সংকট নিরসনে সংলাপ ও আন্তরিক আলোচনায় বসার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে এবং অবশ্যই জনগণের ইচ্ছার প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্মান জানাতে হবে।

অনুষ্ঠানে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার শিক্ষক সেলিম রেজা বলেন, ‘গত ১৫ বছরে আমরা দেশে কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোনো সংলাপ দেখিনি। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের পর এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় শুধু আমরা তিন জোটের রূপরেখার সমঝোতা দেখেছি। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান দেখা যায়নি। এটা গণতন্ত্রের জন্য শুভ কোনো লক্ষণ হতে পারে না।’
কর্মশালায় সানজিদ আলম নামের এক তরুণ ভোটার বলেন, ‘আমরা একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ চাই। ভোট দেওয়া ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা চাই। ভোটে যাতে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে, সেই পরিবেশ চাই। এতে জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভোটাররা সুযোগ পাবেন। এমন একটা নির্বাচন চাই আমরা।’

কর্মশালায় বক্তৃতা করেন বরিশাল জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি নজরুল হক, জাসদের (ইনু) জেলা সভাপতি আবদুল হাই, জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি মহসিন উল ইসলাম, গণফোরামের জেলা সভাপতি হিরণ কুমার দাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিউদ্দীন মানিক বীরপ্রতীক, নারী নেত্রী তাজিনা হোসেন মজুমদার, বরিশাল সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেতা কহিনুর বেগম, ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্য মিজানুর রহমান, বরিশাল জেলা সুজনের সভাপতি অধ্যাপক গাজী জাহিদ হোসেন, দি হাঙ্গার প্রকল্পের বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী মেহের আফরোজ প্রমুখ।

কর্মশালায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার লক্ষে ১৫ দফা প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে সুজনের বরিশাল মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের বিভাগীয় পর্যায়ের এই নাগরিক সংলাপ শেষে ঢাকায় জাতীয় সংলাপের আয়োজন করা হবে। সেখানে দেশের প্রতিটি প্রান্তের বিভিন্ন পেশার ও রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।’