বরিশালে বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ১৭ নারীকে বিয়ের অভিযোগ, সর্বত্র আলোচনা

বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতারণা করে ১৭ বিয়ে করার অভিযোগে মানববন্ধন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরেছবি: সংগৃহীত

বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. কবির হোসেন পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে প্রলোভন দেখিয়ে ১৭ জন নারীকে বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার নগরের কাশীপুর এলাকায় স্ত্রী দাবি করে বেশ কয়েকজন নারী প্রতারণার অভিযোগে ওই কর্মকর্তার বিচার দাবি করলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ নিয়ে বরিশালের বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।

স্ত্রী দাবি করা নারীদের অভিযোগ, কবির হোসেন আগে ঢাকা, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত ছিলেন। বিদেশে পড়াশোনা, সরকারি চাকরি, বিমানবালা হিসেবে সুযোগ বা সম্পত্তি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তিনি অন্তত ১৭ জন নারীকে বিয়ে করেছেন। আগের বিয়ের বিষয়গুলো গোপন রেখেই তিনি ওই নারীদের বিয়ে করেন বলে অভিযোগ।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বন কর্মকর্তা কবির হোসেন পাটোয়ারীর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর আইনজীবী এনায়েত হোসেন এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেছেন, ওই নারীদের অভিযোগ সত্য নয়। বিষয়টি ব্যক্তিগত। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করার পর তদন্ত চলমান। তদন্ত চলাকালে এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না।

বন বিভাগের একটি সূত্র জানায়, ডিএফও হিসেবে ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর বরিশালে যোগদানের আগে খুলনায় কর্মরত ছিলেন কবির হোসেন। বৃহস্পতিবার নগরের কাশীপুর এলাকায় বিভাগীয় বন সংরক্ষকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিচার দাবি করেন কয়েকজন নারী। এ সময় স্ত্রী দাবি করা নারী ও তাঁদের স্বজনদের হাতে বিচার চেয়ে ব্যানার দেখা যায়। কর্মসূচিতে ঢাকার নাজনীন আক্তার, নারায়ণগঞ্জের সোনিয়া আক্তার, খুলনার নাসরিন আক্তারসহ প্রতারণার শিকার বেশ কয়েকজন নারী উপস্থিত ছিলেন।

ভুক্তভোগী কয়েকজন বলেন, কবির হোসেন চাঁদপুরের মতলব উপজেলার বাসিন্দা। তিনি আগে ঢাকা, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত থাকাকালে বিয়ের নামে এসব প্রতারণার আশ্রয় নেন। বিয়ের অল্প সময়ের মধ্যে যৌতুক দাবি ও শারীরিক নির্যাতনের কারণে তাঁদের কয়েকজনের সংসার ভেঙে যায়।

সূত্রটি জানায়, সর্বশেষ খুলনার চাকরিজীবী খাদিজা আক্তারকে চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেন কবির হোসেন। বিয়ের দ্বিতীয় দিনই খাদিজার বাবার বাড়ির জমির অংশ লিখে দিতে বললে রাজি না হওয়ায় তাঁকে বরিশালে বন কর্মকর্তার সরকারি বাসভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়।

খাদিজা আক্তার অভিযোগ করেন, ‘আমাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কবির হোসেন বিয়ে করেছেন। পরে বাবার বাড়িতে পাওয়া সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় তিনি আমাকে নির্যাতন করে বের করে দেন।’

নাসরিন আক্তার নামের আরেক নারী অভিযোগ করেন, ‘আমাকেও প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তিনি বিয়ে করেন। বিয়ের নাটক ধরা পড়ার পর আমাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।’ তাঁর অভিযোগ, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার পদ ব্যবহার করে তিনি ১৭টি বিয়ে করেছেন। যেসব জায়গায় চাকরি করেছেন, সেখানকার নারীদের সঙ্গে একইভাবে প্রতারণা করেন। এখন তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

ভুক্তভোগী নারীরা জানান, তাঁরা প্রতারণার ঘটনায় আদালতে এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। একবার দাপ্তরিক প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেও প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় তিনি দ্রুত জামিনে মুক্তি পান। তাঁরা কবির হোসেনকে বন বিভাগ থেকে অপসারণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান।

বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বন কর্মকর্তার একাধিক বিয়ের মাধ্যমে প্রতারণার বিষয়টি আমার জানা নেই। ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল নগরের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, একজন উচ্চপদস্থ বন কর্মকর্তার ব্যাপারে এমন অভিযোগ গুরুতর আইনের লঙ্ঘন। এটা তাঁর নীতিনৈতিকতাকে চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যথাযথভাবে তদন্ত করে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।