পাহারা উঠতেই সংঘর্ষে জড়ালেন ভৈরবের কর্তাবাড়ি ও সরকার বাড়ির লোকজন

আধিপত্য ধরে রাখাকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামের কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির মধ্যে সংঘর্ষ উভয় পক্ষের ৩০ জন আহত হয়। আহত কয়েকজনকে আনা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়
ছবি: প্রথম আলো

আধিপত্য ধরে রাখাকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামের কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে—এমন আশঙ্কায় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে গ্রামটিতে অবস্থান করছিলেন সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত গ্রামে ছিলেন তাঁরা। তাঁদের উপস্থিতির সময়ে সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। যখনই তাঁরা গ্রাম ছাড়লেন, তখনই উভয় পক্ষ দা–বল্লম নিয়ে জড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন।

সংঘর্ষে গুরুতর আহত সরকারবাড়ির সরকার হাবিব ও মোবারক হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কর্তাবাড়ির আহতদের মধ্যে আঙ্গুর মিয়া, হুমায়ুন মিয়া, সাকিব মিয়া, মো. মামুন, মো. রাজু, বুলবুল মিয়াকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মুঠোফোনে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানী বলেন, ‘সকাল থেকে গ্রামে পইড়া ছিলাম। যেই চইলা আসলাম, তখনই দেরি করতে পারল না। দা–বল্লম নিয়া নাইমা পড়ল। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।’

স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য, কর্তা ও সরকার বংশের বিরোধ ৫৬ বছরের। বিরোধের কারণ, এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখা। বর্তমানে কর্তাবাড়ির নেতৃত্বে আছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন। সরকারবাড়ির নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান শেফায়েত উল্লাহ সরকার। ৫৬ বছরে দুই পক্ষের প্রাণ গেছে ১৪ জনের। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। মামলা হয়েছে শতাধিক। বছরে একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছাড়া বছর পার হয়েছে—এমন তথ্য কারও জানা নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির মধ্যে গত ১৫ এপ্রিল সংঘর্ষ হয়। ওই দিনের সংঘর্ষে কর্তাবাড়ির লোকজন কোণঠাসা হয়ে পড়ে। শেষে সবাই অন্য গ্রামে আশ্রয় নেন। এর মধ্যে ১৮ এপ্রিল সংঘর্ষ হয় লাগোয়া গ্রাম ভবানীপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে মিজান মিয়া নামের সরকারবাড়ির পক্ষের একজন নিহত হন। এ ঘটনায় উত্তেজনা আরও বাড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাড়িছাড়া হওয়ার ঠিক ২৮ দিন পর কর্তাবাড়ির লোকজন দলগতভাবে আজ সকাল থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেন। এই খবরে কর্তাবাড়ির লোকজনের বাড়ি ফেরানো ঠেকাতে সরকারবাড়ির লোকজন ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। আবার কর্তাবাড়ির লোকজনও সম্ভাব্য হামলা মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নিয়েই বাড়ি ফেরেন। উভয় পক্ষের উত্তেজনার খবর জানতে পেরে সকাল ৯টা থেকে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা মৌটুপি গ্রামে অবস্থান নেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে কর্তাবাড়ির লোকজন সকাল থেকে বিনা বাধায় বাড়ি ফিরতে শুরু করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মৌটুপি গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার পর বেলা তিনটা থেকে উভয় পক্ষ দা–বল্লম নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই খবর জেনে আবার গ্রামে যান পুলিশ ও সেনাসদস্যরা। সন্ধ্যার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

কর্তাবাড়ির নেতৃত্বে থাকা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘সরকারদের চাওয়া কর্তাবাড়ির একটিও মানুষও যেন বাড়ি ফিরতে না পারে।’

সরকারবাড়ির নেতৃত্বে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান সরকার শেফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘বাড়ি আইসা আমরার ওপর আক্রমণ করব, এমন প্রস্তুতি লইয়া কর্তারা বাড়ি আইছে। এই কারণে সেনাবাহিনী চোখের আড়াল হওয়ার পর কর্তারা আমরার ওপর ঝাঁপাইয়া পড়ছে। আমরা কেবল প্রতিহত করছি।’