‘লাশের রাজনীতি বন্ধ করুন’: মিটফোর্ড হত্যার বিচার দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে চট্টগ্রাম নগরে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নগরের ২ নম্বর গেটে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নগরের ষোলশহর স্টেশন থেকে পদযাত্রা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা এসে জড়ো হন ২ নম্বর গেট মোড়ে। সেখানে তাঁরা ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা/ জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’, ‘চাঁদাবাজের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’, ‘বিএনপির অনেক গুণ/ ১০ মাসে এক শ খুন’—এমন আরও নানা স্লোগান দেন।
কর্মসূচিতে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে সারা দেশে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেখেছি। আমরা দেখেছি, ১০ মাসে ১০০টির বেশি খুন করেছে। এ নতুন বাংলাদেশে আর কোনো চাঁদাবাজি বরদাশত করা হবে না। নতুন বাংলাদেশে আর কোনো সন্ত্রাসবাদ বরদাশত করা হবে না।’
খান তালাত মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের একজন ভাইকে পাথর দিয়ে মারা হয়েছে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলছি, আপনারা যদি লাশের রাজনীতি বন্ধ না করেন, তাহলে শেখ হাসিনা যে পথে গিয়েছে, আপনাদেরও সে পথে যেতে হবে। আপনারা যদি হাসিনার পথ অবলম্বন করেন, তাহলে হাসিনার মতোই আপনাদের পরিণতি হবে। নতুন করে হাসিনা হতে যাবেন না। মজলুম থেকে জালিম হতে যাবেন না। জালিমের পরিণতি ভালো হয় না।’
কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম নগরের মুখপাত্র লিজা খানম বলেন, ‘বাংলাদেশের বৃহত্তম দলের নেতা তারেক রহমান। আমি আপনাকে বলতে চাই, আপনি লন্ডনে থেকে বিড়াল নিয়ে ছবি পোস্ট করা অফ (বন্ধ) করেন। আপনি আপনার এ সন্ত্রাসকারী ভাইদের আটকান। আপনি লাগাম দেন। লন্ডনে বসে বসে আপনি উসকানি বন্ধ করেন। আপনি বলেছেন, অদৃশ্য শক্তি এখন দৃশ্যমান হয়েছে। আপনারা চাঁদাবাজি করবেন। আমরা শক্ত হাতে রুখে দিতে গেলেই অদৃশ্য শক্তি হয়ে যাই। আপনারা যে দলেরই হন না কেন, আমরা শেখ হাসিনারে হটিয়েছি। আপনাদের হটাতে আমাদের ১৫ সেকেন্ডও লাগবে না।’
গত বুধবার রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯)। হত্যার আগে ডেকে নিয়ে তাঁকে পিটিয়ে এবং ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাঁকে বিবস্ত্র করা হয়। তাঁর শরীরের ওপর উঠে লাফায় কেউ কেউ।
এ ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা জানা গেছে। গতকাল সন্ধ্যায় এই মামলার দুই আসামিকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী যুবদল। হত্যা মামলার আরও দুই আসামিকে নিজেদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল।
ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ মিছিল
মিটফোর্ডে হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি এবং ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগরের নেতা-কর্মীরা। আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নগরের জিইসি মোড় এলাকায় এ কর্মসূচি পালিত হয়। এর আগে নগরের মুরাদপুর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়, যা জিইসি গিয়ে শেষ হয়েছে।
কর্মসূচিতে সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগে অস্ত্র ছিল না। মানুষ পাথর কেটে অস্ত্র তৈরি করত। আমাদের ভাই সোহাগের বুকে–পিঠে পাথর দিয়ে একের পর এক আঘাত করা হয়েছে। এই লাশের ওপর নৃত্য করা হয়েছে। এ ঘটনার বিচার করতে হবে।’
ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর উত্তরের সভাপতি তানজির হোসেন বলেন, সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীরা যে দলেরই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।