ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০১৬ সালে মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু, ২০২১ সালে হেফাজতের সহিংসতাসহ বিভিন্ন মামলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের অযথা হয়রানি না করার দাবি জানানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা এ দাবি জানান। এ সময় বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, অবৈধ ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে সারা দেশে নির্যাতন, নিপীড়ন, মিথ্যা মামলা, হামলা, গ্রেপ্তার, অপহরণ, গায়েবি মামলা, খুন ও গুম নিত্যদিনের খেলা হিসেবে চালাচ্ছে। সেই সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপিকে নিধন করতে হেফাজতের মামলাগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

২০২১ সালের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকা, চট্টগ্রামের হাটহাজারি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিবাদ হয়। ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদে মুসল্লিদের ওপর সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের হামলার অভিযোগ ওঠে। এর প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলাম ও মাদ্রাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বলেন, ওই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পুলিশ মিছিলে বাধা প্রদানসহ লাঠিপেটা ও গুলিবর্ষণ করে। এতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে দুজন নিহত হন। অনেক হতাহতের ঘটনার পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ২৭ মার্চ বিকেলে ভাঙচুরের প্রতিবাদে শহরে জেলা আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ মিছিল বের করে। শহরের মাদ্রাসা মোড় অতিক্রমকালে মিছিলের পেছন থেকে দলটির নেতা-কর্মীরা জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসাকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ সহিংসতায় রূপ নেয়। ২৮ মার্চ হেফাজতের ডাকা ২৪ ঘণ্টার হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বাড়িঘর, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের ওপরও আক্রমণের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

২০১৬ সালে ১১ জানুয়ারি নাসিরনগর উপজেলার দাঁতমণ্ডলে একটি মাদ্রাসা বন্ধের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে কওমি ছাত্র ঐক্য পরিষদ একটি মিছিল বের করে। কওমি ছাত্র ঐক্য পরিষদের সভাপতি অটোরিকশায় জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে গেলে ছাত্রলীগের নেতার সঙ্গে অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এর জেরে কিছু মাদ্রাসাছাত্র জেলা পরিষদের সামনে যাওয়ার পর অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসায় ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। ওই সংঘর্ষে মাসুদুর রহমান নামের এক মাদ্রাসাছাত্র নিহত হন।

জিল্লুর রহমান বলেন, ওই ঘটনার পর ১২ জানুয়ারি মাদ্রাসাপক্ষ হরতালের ডাক দেয়। পরে সমঝোতা হয় যে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ হরতাল প্রত্যাহার করবে এবং দুই পক্ষের কেউই কারও বিরুদ্ধে মামলা করবে না। কিন্তু সে সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারও নাম উল্লেখ না করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। সেই জিডিকে বিরোধী দল দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান মোল্লা ও জহিরুল হক জানান, ২০২১ সালে ৫৭টি ও ২০১৬ সালে ১৬টি মামলা হয়। এসব মামলায় বিএনপির ২০০ থেকে ২৫০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখনো সাতজন কারাগারে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের অযথা হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ ও সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান মোল্লা, জহিরুল হক, সিরাজুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, গোলাম সারওয়ার, আনিসুর রহমান, এ বি মোমিনুল হক, পৌর বিএনপির সভাপতি নজির উদ্দিন আহমেদ, থানা বিএনপির আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।