নওগাঁয় কাটা হচ্ছে সড়কের পাশের সহস্রাধিক পুরোনো গাছ

সড়ক সম্প্রসারণে দুই পাশের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। গতকাল শনিবার দুপুরে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার জন্তিগ্রাম–কদমতলী সড়কের কদমতলী এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার নওগাঁ–মহাদেবপুর প্রধান সড়ক থেকে শুরু হয়ে মহাদেবপুর–মাতাজীহাট সড়কে মিলেছে একটি গ্রামীণ সড়ক। সেই সড়কের জন্তিগ্রাম থেকে কদমতলী মোড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক স্থানীয় লোকজনের কাছে ‘অর্জুনগাছের সড়ক’ নামে পরিচিত। সড়কটির দুই পাশে অর্জুনসহ বিভিন্ন জাতের গাছের সমারোহ। কিন্তু এসব গাছ আর থাকবে না। সড়ক সম্প্রসারণের নামে এখানকার এক হাজারের বেশি গাছ কাটা শুরু হয়েছে।

গতকাল শনিবার দুপুরে জন্তিগ্রাম–কদমতলী সড়কটিতে গিয়ে দেখা যায়, কদমতলী মোড় থেকে প্রায় ২০০ মিটার এলাকাজুড়ে সড়কটির দুই পাশের গাছ কাটা শুরু হয়েছে। সড়কের দুই পাশে থাকা ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে লাগানো অর্জুনগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কাটা হচ্ছে। ৮ থেকে ১০ শ্রমিকের কেউ গাছের ডাল, কেউ আবার গাছের গোড়া কাটতে ব্যস্ত। কেটে ফেলা কিছু গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখা হয়েছে সড়কের পাশে।

স্থানীয় লোকজন জানান, সড়ক প্রশস্তকরণের নামে ঔষধি গুণসম্পন্ন অর্জুনগাছসহ প্রায় দেড় হাজার গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সড়কটিতে প্রচুর অর্জুনগাছ থাকায় এটি স্থানীয়ভাবে অর্জুনগাছের সড়ক নামেই পরিচিত। দূরদূরান্ত থেকে এই সড়কে মানুষ আসত অর্জুনগাছের ছাল সংগ্রহ করার জন্য। জন্তিগ্রাম–কদমতলী সড়কটি যে পরিমাণ প্রশস্ত আছে, এটি দিয়ে আরও অন্তত ২০ থেকে ৩০ বছর চলাচল করতে এলাকাবাসীর কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাঁদের অভিযোগ, উন্নয়নের নামে সড়কের গাছ কেটে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করতেই এই কাজ করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়ক প্রশস্তকরণের নামে গাছগুলো কাটার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগ। মহাদেবপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী সৈকত দাস বলেন, সড়ক প্রশস্ত করার জন্য গাছগুলো কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গাছগুলো রেখে সড়ক প্রশস্তকরণে ঝুঁকি ছিল। যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো কাটা হচ্ছে। এখান থেকে টাকা আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া প্রশস্তকরণ কাজ শেষ হয়ে গেলে সেখানে আবারও গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

সড়কের পাশে রাখা হয়েছে কাটা গাছের গুঁড়ি
ছবি: প্রথম আলো

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) নওগাঁ রিজিয়ন–২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে। সড়কের কাজ শেষ হলে নতুন করে আবারও গাছ লাগানো হবে। তবে কতগুলো গাছ বিক্রি করা হয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁর মনে নেই বলে জানান।

জন্তিগ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক সুবল কুমার বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে সারি সারি অর্জুনগাছের এমন দৃশ্য বিরল। গাছগুলোর বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছর। গাছগুলো বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) উদ্যোগে লাগানো হয়েছিল। দুই পাশে লাগানো অর্জুনগাছ সড়কের সৌন্দর্য যেমন বাড়িয়েছিল, তেমনি প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে রোগীরা আসতেন গাছের বাকল ও পাতা সংগ্রহ করতে। সেসব গাছ কাটায় এখন এলাকাবাসী হতাশ।

বন্য প্রাণী সংরক্ষণে জাতীয় পদক পাওয়া মহাদেবপুরের বাসিন্দা ইউনুছার রহমান বলেন, ‘গাছ না কেটে বা পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে কীভাবে উন্নয়ন করতে হবে, সেটি এ দেশের নীতিনির্ধারকেরা যেন জানেনই না। অথচ বিদেশে এর ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। আমরা উন্নয়ন চাই, তবে এমন উন্নয়ন না হোক, যেটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। সরকারি উন্নয়নের ও সড়ক সম্প্রসারণের দোহাই দিয়ে যেভাবে গাছ কাটা হচ্ছে, তাতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে।’