‘ছেলেকে আর ফিরে পাব না, হত্যাকারীদের বিচার দেখতে চাই’

ফরিদপুরে সবুজ হত্যা মামলার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়। ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে রোববার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরে সবুজ মোল্লা হত্যা মামলার প্রধান আসামি জেলা ছাত্রদল সভাপতি আদনান হোসেনসহ জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। পরে এ দাবিতে পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এসব কর্মসূচিতে সবুজের পরিবারের সদস্য ও এলাকার লোকজন অংশ নেন।

বিক্ষোভকারীরা আজ রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে প্রথমে শহরের ব্রাহ্মসমাজ সড়কে সমবেত হন। তাঁরা স্লোগান দিতে দিতে মিছিল করে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের মোড় হয়ে মুজিব সড়ক দিয়ে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে যান। পরে প্রেসক্লাবের সামনে মুজিব সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয় ‘ফরিদপুরবাসী’র ব্যানারে।

মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন নিহত সবুজ মোল্লার বাবা শহীদ মোল্লা, মা সবেদা বেগম, খালা রেহানা বেগম এবং সবুজের দুই বন্ধু নাজমুল হাসান ও আ ত ম প্রত্যয় আনোয়ার। শহীদ মোল্লা বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু আমার ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দেখে যেতে চাই। এমন কঠিন বিচার চাই, যাতে আর কোনো বাবাকে ছেলেহারা হতে না হয়।’

সবেদা বেগম বলেন, ‘যারা আমার কোল খালি করেছে, তাদের ফাঁসি চাই। আসামিরা আমাদের নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। আমরা আমাদের নিরাপত্তা চাই।’

পুলিশ জানায়, ২০২২ সালের ৪ জুলাই রাতে ফরিদপুর পৌরসভার বায়তুল আমান বটতলা এলাকা দিয়ে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন সবুজ। এ সময় দুর্বৃত্তরা সবুজ মোল্লাকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। হামলাকারীরা সবুজের বাঁ হাত কনুইয়ের নিচ থেকে কেটে নিয়ে যায়।

মানববন্ধনে সবুজ মোল্লার বাবা শহীদ মোল্লা ও মা সবেদা বেগম বক্তব্য দেন
ছবি : প্রথম আলো

এ ঘটনায় ৬ জুলাই সবুজের বাবা বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আদনান হোসেনসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করা হয়। ২৩ মে ফরিদপুরে ছাত্রদলের কর্মী সভা চলাকালে গোয়ালচামট এলাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পৌর কমিউনিটি সেন্টার থেকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হন আদনান হোসেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সবুজ খুন হওয়ার পর বেশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা জামিনে বেরিয়ে এসে সবুজের পরিবারের সদস্যদের  হুমকি দিচ্ছে। এ জন্য তাঁরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

মানববন্ধন শেষ করে বিক্ষোভকারীরা মিছিল করে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যায়। পরে সবুজের মা–বাবাসহ চার সদস্যের একটি দল পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলমের সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরে এবং স্মারকলিপি দেয়।

ফরিদপুর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ মতিন বলেন, এ মামলার প্রধান আসামি আদনান হোসেনকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বর্তমানে আদালতের নির্দেশে দুই দিনের রিমান্ডে আছেন। এ মামলায় আদনানসহ এজাহারনামীয় মোট আসামি ১০ জন। এর মধ্যে তিনজন আগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁরা বর্তমানে জামিনে আছেন। বাকি আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পরবর্তী সময়ে নিম্ন আদালতে হাজির না হয়ে পলাতক রয়েছেন।