পাপিয়া-কাণ্ডে ‘দায়িত্বে অবহেলায়’ এবার কাশিমপুর মহিলা কারাগারের জেল সুপারকে বদলি
গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ওবায়দুর রহমানকে রাজশাহী প্রশিক্ষণকেন্দ্রের প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে বদলি করা হয়েছে। কারাগারের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, যুব মহিলা লীগের সাবেক নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার কারাগারের ভেতরে অপরাধী চক্র গড়ে তোলার ঘটনার জেরে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের (কারা-১ শাখা) উপসচিব তাহনিয়া চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ওই বদলির আদেশ দেওয়া হয়। এর আগে দায়িত্বে অবহেলার কারণে গত ৩০ জুলাই কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছয় কারারক্ষীকে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বদলি করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাশিমপুর কারাগারের এক কর্মকর্তা বলেন, ওবায়দুর রহমানের মহিলা কারাগারের জেল সুপার দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় বন্দী নির্যাতনসহ নানা অনিয়ম হয়েছে। এসব বিষয়গুলো ‘পাপিয়া-কাণ্ডের’ পরই জানাজানি হচ্ছে। ওবায়দুর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। এ কারণে তাঁকে বদলি করা হয়েছে।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ৩০ জুলাই পাঠানো একটি আদেশে একযোগে ছয় কারারক্ষীকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়। কারারক্ষী আলেয়া চৌধুরীকে লক্ষ্মীপুর, শাম্মী আক্তারকে সুনামগঞ্জ, মোছা. সোহেলা আক্তারকে ঝালকাঠি, সেলিনা আক্তারকে শেরপুর, ঝর্ণা আক্তারকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও লাকী আক্তারকে কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের তাৎক্ষণিক কর্মমুক্তির (স্ট্যান্ড রিলিজ) আদেশে কারা মহাপরিদর্শকের পক্ষে স্বাক্ষর করেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান।
জেল সুপারের বদলির বিষয়ে জানতে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ফারহানা আক্তারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। তাঁকে খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি। এ বিষয়ে ওবায়দুর রহমানের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের পর গাজীপুরের কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে রাখা হয়। তিনি অপরাধ কার্যক্রম শুরু করেন কারাগারের ভেতরেও, গড়ে তোলেন অনুগত বাহিনী। অভিযোগ রয়েছে, কারাগারে বন্দী ও অন্য নারীদের কাছ থেকে তিনি টাকাপয়সা ও জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিতেন। তাঁদের ওপর চালাতেন নির্যাতন। কয়েক কারারক্ষী ও নারী বন্দী তাঁর এসব কাজে সহযোগিতা করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঢাকায় আদালতে নথি চুরির অভিযোগে এক শিক্ষানবিশ আইনজীবীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে পাঠায়। কারাগারে থাকা অবস্থায় তাঁকে নির্যাতন করা হয়। গত ২৫ জুন ওই নারী আইনজীবীর ভাই গাজীপুর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে লিখিত অভিযোগ করে তাঁর বোনকে নির্যাতনের ঘটনার বিচার দাবি করেন। এ অভিযোগের মাধ্যমে শামীমা নূরের নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। ওই ঘটনার পর পাপিয়াকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মহিলা কারাগারের মেট্রন ফাতেমাকে প্রত্যাহার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার সুপারিশ করে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি।