‘সগলি কচ্চে, ভোট দিলেও লৌকা জিতবি, না দিলেও জিতবি’

বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মজিবর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে ‘নির্ভার’ আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মজিবর রহমান মজনু। এই আসনে তিনিসহ মোট পাঁচজন প্রার্থী এখনো মাঠে থাকলেও জোরালো কোনো প্রচারে নেই অন্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা বলছেন, এই আসনে নৌকার জয় প্রায় নিশ্চিত, অপেক্ষা শুধু ভোটের দিনের।

গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলার অন্তত ২০ জন ভোটারের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা বলছেন, বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে নৌকার সঙ্গে অন্য কোনো প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না তাঁরা। ফলে ভোট নিয়ে উৎসাহ নেই ভোটারের। এতে করে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসবেন কি না, এই আশঙ্কা আছে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের।

শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের দড়িমুকুন্দ গ্রামের ভোটার আঙ্গুরী বেগম বলেন, ‘অন্যবার বাড়ি বাড়ি ভোট চাবার আসিচ্চিল। এবার ভোটারের কদর নাই। ক্যানডিডেটের (প্রার্থী) খবর নাই। কেউ অ্যাকনা (একটু) ভোট চাবার আসিচ্চে না। লৌকা ছাড়া কোনো মার্কা চোখত পরিচ্চে না। সগলি কচ্চে (সবাই বলছে), ভোট দিলেও লৌকা জিতবি (জিতবে), না দিলেও জিতবি।’

শেরপুর সদরের কলেজছাত্রী স্মৃতি জাহান এবার প্রথমবার ভোটার হয়েছেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ ভোট চাইতে আসেননি। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নুজহাত বলেন, এবার ভোটের আমেজ নেই, প্রার্থীদেরও খবর নেই।

মজিবর রহমান বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি শেরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রথমবারের মতো তিনি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী প্রার্থী নেই বলে নিশ্চিত বিজয় জেনে আমরা কিন্তু ঘরে বসে নেই। দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছি। প্রচারণা শুরুর পর থেকেই সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ, কুশল বিনিময়সহ ভোটারদের কাছে নানাভাবে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। বিগত দিনে সরকার এলাকায় যে উন্নয়ন করেছে, সেসব বিবেচনায় ভোটাররা নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য উজ্জীবিত হয়েছেন। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁরা ভোটকেন্দ্রে আসবেন। বিজয় নিশ্চিত জেনেও আমরা ভোটার উপস্থিতির হার বাড়াতে ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি।’

আরও পড়ুন

বগুড়া-৫ আসনে ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে হাবিবর রহমান সংসদ সদস্য হন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে হাবিবর মনোনয়ন চাইলেও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি ছাড়াও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) থেকে টেলিভিশন প্রতীকে আলী আসলাম হোসেন, ইসলামী ঐক্যজোট থেকে মিনার প্রতীকে নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে ডাব প্রতীকে মামুনুর রশীদ এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে মশাল প্রতীকে রাসেল মাহমুদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বগুড়া–৫ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর একটি নির্বাচনী ক্যাম্প। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় শেরপুর পৌর শহরের বাসষ্ট্যান্ড এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

গতকাল নির্বাচনী এলাকা ঘুরে নৌকার ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টার চোখে পড়লেও অন্য প্রতীকের প্রচার-প্রচারণা তেমন চোখে পড়েনি। শেরপুর পৌর শহরে একটি ইজিবাইকে মাইকে গানের সুরে নৌকার প্রচার শোনা গেলেও অন্য প্রতীকের কোনো মাইকিংও শোনা যায়নি।

শেরপুর সদরের একটি বিপণিবিতানে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি করেন আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, ‘ভোট হবি, ক্যানডিডেট, তারকেরে লোকজন (প্রার্থী ও তাঁদের লোকজন) রাত-বিয়ানে ভোট চাবার আসপি (চাইতে আসবে)। মার্কা বিলাবি, মিছিল হবি, সভা হবি। কত আমুদ ফুর্তি হবি! কিন্তু এইবার ভোটের পরিবেশ এক্কেবারে শ্যামশ্যামা, নিরুত্তাপ। কেউ ভোট চাবারও আসিচ্চে না, কেউ অ্যাকনা কদরও করিচ্চে না।’

আরও পড়ুন

দুপুরে মির্জাপুর বাজারে কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নৌকার একাধিক কর্মী বলেন, এই আসনে নৌকার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ফলে নৌকার বিজয় এখন সময়ের অপেক্ষামাত্র। তবে নৌকার প্রার্থী মজিবর রহমান বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ কারণে ভোটের বড় ব্যবধানে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই প্রচার-প্রচারণা চলছে। কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্যই কর্মীরা নানা কাজ করছেন। এ জন্য নানা কৌশল নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, নৌকার নির্বাচনী সভা-সমাবেশে লোকসমাগম বাড়াতে এবং ভোটের দিনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ওপর দলীয় ‘চাপ’ আছে। ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক না হলে টিসিবি কার্ড ছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কার্ড বাতিল করা হবে বলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রচার করছেন। বাধ্য হয়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক চেয়ারম্যানেরাও কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে সংশ্লিষ্ট এলাকার মেম্বারদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

শেরপুর উপজেলার ভাটারা গ্রামের একজন ভোটার বলেন, ‘ম্যালা দিন পর ভোট হচ্চে। কিন্তু এডা ক্যাংকা ভোট? লৌকা ছাড়া কোনো মার্কা দেকিচ্চি না।’

আরও পড়ুন