ভাতের জন্য কান্নাকাটি, সেই ভাত রান্নার আগুনেই শিশুটি অঙ্গার

রংপুর জেলার মানচিত্র

চার বছরের শিশু স্নেহা। সে ভাত চেয়ে শুরু করে কান্নাকাটি। মা মঞ্জুয়ারা বেগম বুকের ধনকে ঘরের ভেতরে ঘুম পাড়িয়ে পাশেই চুলায় ভাতের জন্য চাল বসিয়ে দেন। একপর্যায়ে মঞ্জুয়ারা বাড়ির বাইরে যান। কিছুক্ষণ পর তিনি দেখতে পান বাড়ির ভেতরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তাঁর চিৎকার-কান্নাকাটিতে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন।

প্রচণ্ড আগুনের কারণে ঘরের ভেতরে কেউ ঢুকতে পারছিলেন না। মঞ্জুয়ারা তখন ছটফট করে লোকজনকে আকুতি জানাচ্ছিলেন, তাঁর আদরের বুকের ধনকে ঘর থেকে উদ্ধার করতে। পরে প্রতিবেশীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। তবে শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করতে পারেননি। ঘরের ভেতরেই শিশুটি আগুনে পুড়ে মারা যায়।

মর্মস্পর্শী ওই ঘটনা ঘটেছে আজ রোববার বিকেল চারটার দিকে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নয়াপাড়া গ্রামে।

ওই শিশুর কয়েকজন প্রতিবেশী বলেন, হতভাগ্য শিশু স্নেহার বাবা সিরাজুল ইসলামের পেশায় দিনমজুর। মা মঞ্জুয়ারা গৃহিণী। তাঁদের আরও একটি ছেলে ও মেয়েসন্তান রয়েছে। স্নেহা ছিল তৃতীয় সন্তান।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, চোখের সামনে প্রিয় সন্তানের আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনাটি মঞ্জুয়ারা কিছুতেই মানতে পারছেন না। তিনি বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন।

কাঁদতে কাঁদতে শিশুটির বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মাসুম (শিশু) সন্তানটার ভাগ্যে কি এই ছিল! আহা রে এই কষ্ট বুকে নিয়ে আমি বাঁচব কেমন করে।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হুমায়ুন কবীর বলেন, শিশুটি ভাত খেতে চেয়ে কান্নাকাটি করে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু মা তার মুখে আর ভাত তুলে দিতে পারেননি। ঘটনাটি ভীষণ হৃদয়স্পর্শী।

বদরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, শিশু স্নেহাকে তার মা টিনের বেড়ার একমাত্র ঘরে ঘুমে রেখে বারান্দার চুলায় ভাত উঠিয়ে বাইরে গিয়েছিলেন। চুলার আশপাশে ছিল পাট ও পাটখড়ি। প্রতিবেশীদের ধারণা, চুলা থেকে পাট ও পাটখড়িতে আগুন লেগে তা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এতে শিশুটি আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। শিশুটির এমন মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।