যে উদ্ভিদের জন্য মাছ ধরা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেটাই এখন রফিকুলদের আয়ের উৎস

শেরপুরের নকলা উপজেলায় ভেসে থাকা জলজ উদ্ভিদ ‘ঝাই’ এখন আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে। সেই ঝাই বিল থেকে সংগ্রহ করে ডাঙায় রাখছেন এখন। সম্প্রতি উপজেলার পেকুয়া বিলের পাড়েছবি: প্রথম আলো

শেরপুরের নকলা উপজেলার গণপদ্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। তিনি একসময় পাশের পেকুয়া বিলে মাছ ধরতেন। সেই আয়েই চলত তাঁর সংসার। তবে একসময় বিলজুড়ে কচুরিপানা ও শ্যাওলা জাতীয় ভাসমান উদ্ভিদ ‘ঝাই’ ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যায়। তবে যেই ‘ঝাই’ একসময় তাঁর জীবিকায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল, সেই ‘ঝাই’ নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে তাঁর জীবনে। এখন এটাই তাঁর আয়ের উৎস।

শুধু রফিকুল নন; উপজেলার পেকুয়া বিলঘেঁষা গণপদ্দি, জালালপুর ও গজারিয়া—এই তিন গ্রামের শতাধিক পরিবার এখন ‘ঝাই’ সংগ্রহ ও বিক্রিতে যুক্ত। এর আয়েই চলে তাদের সংসার।

এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক ভ্যান ঝাইয়ের ওজন ৮ থেকে ১০ মণ হয়। আকারভেদে এই পরিমাণ ঝাই ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্থানীয় লোকজন নৌকা নিয়ে বিলে গিয়ে ঝাই তোলেন। নৌকায় ভরে ডাঙায় নিয়ে আসেন। পরে ভ্যানে করে বিক্রি করেন। গত ১০ বছর ধরে তাঁরা ঝাই বিক্রি করছেন। এলাকায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় তাঁরা খুশি।

ঝাই একধরনের ভাসমান সবুজ উদ্ভিদ। এটি বিল বা খালের পানির ওপর চাদরের মতো ভেসে থাকে। অনেক এলাকায় একে ‘তরুলতা’ বা ‘জলঢাকনা’ নামেও ডাকা হয়। রুই, কাতলা, মৃগেল, শিং, মাগুর ও তেলাপিয়া মাছ ঝাই খায়। প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় বলে এটি মাছের সাশ্রয়ী খাবার হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

গণপদ্দি গ্রামের আবদুর রফ বলেন, আগে মাছ ধরে তাঁর সংসার চলত। ঝাই বাড়ায় মাছ ধরা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে বিল থেকে ঝাই তুলে বিক্রি শুরু করেন। এখন দিনে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হয় তাঁর। এখন ভালোভাবেই সংসার চলে।

গজারিয়া গ্রামের আশরাফ আলী বলেন, তাঁরা তিন–চারজন মিলে দিনে চার ভ্যান ঝাই তোলেন। ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা পাওয়া যায়। অনেকেই এখন এই ঝাই বিক্রি করে সংসার চালান।

প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় বলে ঝাই মাছের সাশ্রয়ী খাবার হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

এই ঝাইয়ের ক্রেতা মাছচাষি মনির হোসেন বলেন, ‘পেকুয়া বিল থে‌কে আমরা ঝাই কি‌নে আনি। দুই ভ্যান ঝাই দিলে ৬‌টি পুকু‌রের দুই সপ্তাহ মাছের খাবার চলে যায়। তাই এখন ফিড কম লাগে।’ আরেক মাছচাষি শ‌ফি উদ্দিন বলেন, ‘আগে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকার মাছের ফিড কিনতে হতো। এখন দুই ভ্যান ঝাই দিলেই সেই চাহিদা পূরণ হয়। এতে খরচ অনেকটা কমে গেছে। সহ‌জে ঝাইও পাওয়া যা‌চ্ছে।’

নকলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অনিক রহমান বলেন, পেকুয়া বিল থে‌কে সংগ্রহ করা ঝাই স্থানীয়ভাবে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি একটি ইতিবাচক দিক। এতে একদিকে মাছচাষিদের খরচ কমছে, অন্যদিকে পেকুয়া বিল–সংলগ্ন জে‌লে ও এলাকাবা‌সীর কর্মসংস্থান সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে।