এবার রাজশাহী বিভাগ থেকে আম পাঠাতে রেলের যে আয়োজন

রাজশাহী অঞ্চল থেকে রেলে আম পরিবহন বিষয়ে এক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম। আজ শনিবার দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর আমচাষি ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সেমিনার করেছেন রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম। আজ শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কনফারেন্স কক্ষে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর।

এতে রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. শফিকুর রহমান (বাদশা), নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী, পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার, জেলা প্রশাসকসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে জানানো হয়েছে, এবার আগামী ১০ জুন থেকে ট্রেনে আম পরিবহনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবার ট্রেনটি যাবে রাজশাহী থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর স্টেশন থেকে প্রতিদিন বিকেল চারটায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে এই ট্রেন। যাত্রাপথে রহনপুর স্টেশন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, আবদুলপুর, ঈশ্বরদী, পোড়াদহ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ভাঙ্গাসহ মোট ১৫টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন। এই ট্রেন ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ২টা ১৫ মিনিটে। এক কেজি আম সর্বোচ্চ ১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে সর্বনিম্ন ৯৪ পয়সায় পাঠানো যাবে।

সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চালু হয়। ২০২৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে মোট ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৮ কেজি আম পরিবহন করা হয়েছে। এতে রেলের রাজস্ব আয় হয়েছে ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা। তবে প্রথম দুই বছরে ট্রেনে আম পরিবহনের ঝোঁক বাড়লেও পরে তা কমতে থাকে। তিনি চার বছরের পরিসংখ্যাও দেখান। এতে দেখা যায়, প্রথম বছর ১ হাজার ১৯৯ মেট্রিক টন আম পরিবহন করা হয়। সে সময় রেল আয় করে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩৪ টাকা। পরেরবার ২ হাজার ২৩৪ মেট্রিক টন আম পরিবহন করা হয়। এ সময় রেল আয় করেছে ২৬ লাখ ৩০ হাজার ৯২৮ টাকা। কিন্তু ২০২২ সালে আম পরিবহন করা হয়েছে মাত্র ১৭৮ মেট্রিক টন। আয় হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার টাকা। পরের বছর ২০২৩ সালে আমের পরিবহন সামান্য বেড়ে ৩৮২ মেট্রিক টন হয়। এতে আয় হয়েছে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯২ টাকা। এই পরিসংখ্যান দেখেই বোঝা যাচ্ছে, আম পরিবহনে সংশ্লিষ্টদের অনীহা আছে। বিষয়টি বোঝার জন্যই আজকের এই সেমিনার। কীভাবে রেল কাজ করলে মানুষ এই যানে আম পরিবহন করবে, সেটি বুঝতে চান তাঁরা।

পরে আমচাষি, আম ব্যবসায়ী, আম পরিবহনে সংশ্লিষ্ট কুরিয়ার সার্ভিস, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, কৃষি কর্মকর্তারা মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। তাঁদের কাছ থেকে একে একে সমস্যাগুলো বের হয়ে আসে।

বাঘার আমচাষি ও রপ্তানিকারী সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি প্রতিবছর দেশের বাইরে আম রপ্তানি করেন। এই আমগুলো সবচেয়ে ভালো হতে হয়। শীতাতপনিয়ন্ত্রিতভাবে নিয়ে যেতে হয়। এখান থেকে নিতেই তাঁদের প্রতি কেজি খরচ পড়ে যায় ৫০ টাকা। ট্রেনে এসি লাগেজে আম পাঠানোর প্রস্তাব দেন তিনি। এ ছাড়া তিনি রাজশাহী থেকে সরাসরি সিলেট ও চট্টগ্রামে আম পরিবহনের সুযোগ তৈরির আহ্বান জানান।

নাচোলের আমচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁরা কুরিয়ারে আম বুকিং করলে ভোক্তা জানতে পারেন, তাঁদের আমের অবস্থান কোথায়। কিন্তু ট্রেনে এই সুবিধা নেই। তিনি এসএমএস সিস্টেম চালুর দাবি জানান।

আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলেন, বাগান থেকে সরাসরি আম ট্রাকে করে ঢাকায় যেখানে ইচ্ছে নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু ট্রেনে আম নেওয়ার জন্য স্টেশনে আসতে হয়। সেখান থেকে আম আবার স্টেশনে নামিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে আড়তে আম নিতে হয়। এতে ওঠানো-নামানোসহ পরিবহন খরচ বেশি পড়ে যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্টেশনে রোদে ও বৃষ্টিতে আম যেনতেনভাবে ফেলে রাখা হয়। প্রতিটি স্টেশনে আম রাখার সুব্যবস্থা থাকলে ট্রেনে আম পরিবহনের ঝোঁক বাড়তে পারে। এ বিষয়ে রেল মন্ত্রণালয় কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করতে পারে।

সভায় অংশগ্রহণকারী ঢাকা-রাজশাহী রেলপথ ডাবল করার জন্য জোর দাবি জানান। তাঁরা বলেন, ট্রেনের সময়সূচি ও যাত্রার দীর্ঘসূত্রতা কমাতে না পারলে কোনো লাভ হবে না। রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান বাদশা ও নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালামও একই কথা বলেন। তাঁরা মন্ত্রীর কাছে দ্রুত এ অঞ্চলে রেলপথ ডাবল লাইন করার দাবি জানান।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন। ট্রেনে আম পাঠানোর ব্যাপারে যেসব সমস্যার কথা এসেছে, তা তাঁরা দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করবেন। এ ব্যাপারে তাঁরা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও বসবেন। তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে আসা যায় কি না, সেটা দেখবেন। আর রেলের ডাবল লাইন এক দিনে করা যায় না। কাজ শুরু হয়েছে, হয়ে যাবে।