কুমিল্লা নগরের ৯টি এলাকায় শব্দদূষণের মাত্রা বেশি। এসব স্থানে ১০৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ হচ্ছে। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কুমিল্লার উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মদ রাজীব এ তথ্য দেন।
ওই ৯ এলাকা হলো শাসনগাছা বাস টার্মিনাল, জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনাল, কান্দিরপাড়, টমছম ব্রীজ, রাজগঞ্জ মোড়, চকবাজার, পদুয়ার বাজার, আলেখারচর ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ-সংলগ্ন এলাকা। এর মধ্যে শাসনগাছা, জাঙ্গালিয়া ও কান্দিরপাড়ে শব্দের তীব্রতা বেশি।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে শব্দ সচেতনতা দিবস উপলক্ষে গতকাল সকাল ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রা বের হয়। এরপর সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে এক আলোচনা সভা হয়। কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পংকজ বড়ুয়া এতে সভাপতিত্ব করেন। এতে কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর, সচেতন নাগরিক কমিটির ( সনাক) সভাপতি রোকেয়া বেগম, সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা, সুজন কুমিল্লার সভাপতি শাহ মো. আলমগীর খান, ইতিহাসবিদ গোলাম ফারুক, আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তারিকুর রহমান, কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল হাসানাত বক্তব্য দেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মদ রাজীব বলেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারত্বমূলক প্রকল্পের আওতায় কাজ করা হচ্ছে। তাঁরা কুমিল্লার সরব ও নীরব এলাকা চিহ্নিত করেছেন। এ পর্যন্ত কুমিল্লার ৯টি স্থানে শব্দদূষণের মাত্রা বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলের বেশি হলে একজন ব্যক্তি সাময়িক বধির ও ১০০ ডেসিবেলের ওপরে হলে বধির হয়। কুমিল্লায় ঘনবসতি ও যানবাহন বেশি। কারণে-অকারণে অযথা হর্ন বাজিয়ে শব্দদূষণ করা হচ্ছে। এতে গর্ভবতী, বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই।
■ ৯ এলাকার মধ্যে শাসনগাছা, জাঙ্গালিয়া ও কান্দিরপাড়ে শব্দের তীব্রতা বেশি।
■ এসব স্থানে ১০৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ হচ্ছে। এতে বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মদ রাজীব আরও বলেন, সারা দেশের ৬৪ জেলায় শব্দদূষণ নিয়ে কাজ করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রতিটি জেলা শহরের নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকার শব্দের মাত্রা পরিমাপ করছেন তাঁরা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পংকজ বড়ুয়া বলেন, শব্দদূষণের উত্স চিহ্নিত করতে হবে। দিন ও রাতে মাত্রা কত, তা জানতে হবে।
হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ, জরিমানা
সিলেট প্রতিনিধি জানান, সিলেটে পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেছেন। অভিযানে হাইড্রোলিক হর্নসহ এসব ব্যবহারের ৫৪টি সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। এ সময় ২১টি যানবাহনের চালককে ২৭ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গতকাল বেলা দুইটার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের বাইপাস মোড়ে শব্দদূষণবিরোধী এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন। এতে সহায়তা করেন আনসার ব্যাটালিয়নের একদল সদস্য। অভিযানে ২১টি যানবাহনে ব্যবহৃত ৪৬টি হাইড্রোলিক হর্ন এবং ৮টি হর্ন ব্যবহারের যন্ত্র জব্দ করা হয়।
এর আগে দিবস উপলক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভা হয়। ‘সুরক্ষিত শ্রবণ, সুরক্ষিত জীবন’ স্লোগানে অনুষ্ঠিত এ সভায় নগরের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, খতিব ও মুয়াজ্জিনরা অংশ নেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থী এবং সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন। সভায় শব্দদূষণের বিভিন্ন উৎস, কারণ, মানবস্বাস্থ্যের জন্য এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়। শব্দদূষণ কমানোর ক্ষেত্রে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে অবদান রাখার বিষয়ে সবাইকে সচেতন করা হয়।